ছোট্ট টংঘর। সেখানে ঢোলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হরিলাল দাস। পাশে তাঁর ছেলে দিলীপ দাস একমনে ঢোল বানাতে ব্যস্ত। গাজীপুর সদর উপজেলার সবুজ প্রকৃতিঘেরা এলাকা দরগারচালায় হরিলালের ঢাকঢোলের পৈতৃক ব্যবসা। বৈশাখের ঢোলের বাজার ধরতে একমনে কাজ করে যাচ্ছেন বাবা–ছেলে।
হরিলাল দাসের বয়স পঞ্চাশ ছুঁই–ছুঁই। জন্ম টাঙ্গাইলে। হরিলালের বাবাও ঢোলের ব্যবসা করতেন। তিনিও ২৫ বছর ধরে পৈতৃক পেশা ধরে রেখেছেন।
হরিলাল জানালেন, জীবিকার সন্ধানে তিনি প্রথমে দিনাজপুরে যান। পরে আসেন গাজীপুরে। প্রথমে ব্যবসা শুরু করেন মাওনা পৌর এলাকায়। পরে থিতু হন সদর উপজেলার সর্বদক্ষিণের দরগারচালায়।
হরিলালের ছেলে দিলীপ দাস অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি সে ঢোল বানানোর কাজে বাবাকে সহায়তা করে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে দরগারচালার বড় একটি আমগাছের নিচে হরিলালের ঢোলের দোকান থেকে টুংটাং আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। কাছে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে বাবা-ছেলে ঢোল তৈরির কাজে ব্যস্ত। বিক্রির জন্য দোকানে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ঢোল, খঞ্জনি, তবলাসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র।
হরিলাল দাস বলেন, তাঁর বাবা ঢোল বানাতেন। সেই ধারাবাহিকতায় তিনিও ঢোলের ব্যবসা ধরে রেখেছেন। বাংলা ঢোল ছাড়াও তিনি তবলা, বায়া, খঞ্জনি বানাতে পারেন। ছেলেকেও ঢোল বানানো ও নষ্ট ঢোল সারাইয়ের বিদ্যাটা দিয়েছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি এখন ছেলেও তাঁকে সাহায্য করছে। এই গ্রামে ভাড়া বাড়িতে থেকে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জানান, একটি ঢোল ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ঢোলের বিভিন্ন উপকরণ তিনি মানিকগঞ্জ থেকে কিনে আনেন। ঢোলের জন্য চামড়া আনা হয় নাটোর থেকে।
তবে ঢোলের ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। এই ব্যবসা করে জীবন চালানোই এখন মুশকিল। বলছিলেন হরিলাল। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বৈশাখ মাস প্রায় এসে যাচ্ছে। কিন্তু ঢোলের ক্রেতা নেই। আগে প্রচুর ঢোল বিক্রি হতো। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই দেশীয় ঐতিহ্যের বাদ্যযন্ত্রের বিক্রি কমে যাচ্ছে। হরিলাল জানান, কোনো মাসে একটাও ঢোল বিক্রি হয় না। তখন জীবন চালানোই কষ্টকর হয়ে যায়। বাদ্যযন্ত্রের এমন দুঃসময় আসবে, এটা তার ধারণায় ছিল না।
হরিলালের ছেলে দিলীপ দাস বলল, সে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বাবার কাছ থেকে ঢোল তৈরির কাজ শিখছে। বাবাকে প্রতিদিন সে একটু একটু করে সাহায্য করে। ঢোল বাজানোর বিদ্যাটাও সে রপ্ত করছে।
বৃহস্পতিবার শ্রীপুরের গোসিংগা গ্রাম থেকে ঢোল কিনতে এসেছিলেন শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি একটি ঢোল সারাইও করাবেন। শফিকুল জানান, অনেক দিন ধরেই হরিলালের কাছ থেকে তিনি ঢোল ও বাদ্যযন্ত্র কেনেন। এ পেশায় লোকজন কমে যাচ্ছে। হরিলাল এখনো দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি বলেন, বৈশাখের আগে বাংলা ঢোলের চাহিদা থাকে। বিভিন্ন মেলা ও গানের অনুষ্ঠান উপলক্ষে ঢোলের বাজারে যেমন সাড়া পড়ার কথা, তেমনটা পড়ছে না।