ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার পর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রমে যে গতি ছিল, তা অনেকটাই শিথিল হয়ে গেছে। মশকনিধনকর্মীদের আগের মতো ওষুধ ছিটাতে দেখা যায় না।
গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার পর নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর ওপর জোর দেয় সিটি করপোরেশন। মাস না পেরোতেই এ কার্যক্রমে ফের অব্যবস্থাপনার চিত্র দেখা যাচ্ছে। ঢিমেতালে কাজ করছেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা।
গতকাল শুক্রবার উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে মশকনিধনকর্মীদের ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়নি। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি বাতিল করে নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রকোপ শুরুর পর মাঝে কিছুদিন প্রায় নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হতো। তবে গেল কিছুদিন থেকে ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে এসেছে।
ডিএসসিসির মশকনিধনকর্মীরা বলছেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কমেছে, তাই তাঁরা শুক্রবার ওষুধ ছিটান না। করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ শুক্রবার তাঁদের ছুটি দিয়েছে। তবে ডিএসসিসির কর্মকর্তাদের দাবি, তাঁরা এমন কোনো নির্দেশ দেননি। গত ৩ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়। ওই আদেশে বলা হয়, ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ থেকে নাগরিকদের রক্ষায় মশকনিধন অভিযান যথাযথ বাস্তবায়ন, সমন্বয় ও নিবিড় তদারকি নিশ্চিতকরণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ আদেশ দ্রুত কার্যকর করা হবে এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। ওই আদেশ এখনো বহাল আছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী, মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করতে লার্ভিসাইডিং ওষুধ সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে ছিটাতে হয়। মশকনিধনকর্মীরা স্থানীয় কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে প্রতিদিন পরিমাণমতো ওষুধ সংগ্রহ করেন।
>সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি বাতিল করে নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
গতকাল সকাল ৮টায় খিলগাঁওয়ে ডিএসসিসির ১ নম্বর কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গিয়ে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। এরপর খিলগাঁও–এ ব্লক, খিলগাঁও–সি ব্লক, খিলগাঁও সরকারি কলোনি, ইমামবাগ, তারাবাগ, মডেল স্কুল, মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এলাকা ঘুরে দেখা গেল, পুরো ওয়ার্ডের কোথাও ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না।
পরে এই ওয়ার্ডের মশার লার্ভা ধ্বংসের কাজে নিয়োজিত স্প্রেম্যান দলটির প্রধান স্বপন কুমার দাসের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রং নম্বর বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। স্প্রেম্যান ইমরান আহমেদ ও মমিন মিয়ার মুঠোফোন দুটি বন্ধ পাওয়া যায়। একই ওয়ার্ডের আরও দুজন স্প্রেম্যান আবুল কালাম ও নুরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা বলেন, শুক্রবার তাঁদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।
মশার ওষুধ না ছিটানোর বিষয়ে জানতে চাইলে এই ওয়ার্ডের মশকনিধন কার্যক্রমের মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা অঞ্চল-২ এর স্বাস্থ্য পরিদর্শক আখতার হোসেন বলেন, ‘যতটুকু জানি, স্প্রেম্যানরা দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। আজকে তাঁদের বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে।’
ডিএসসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ডে মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ছয়জনকে। গতকাল সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হাইকোর্ট, আনন্দবাজার, বার কাউন্সিল ভবন, শিক্ষা ভবন, বিদ্যুৎ ভবন, সেগুনবাগিচা, শিল্পকলা একাডেমি, দুর্নীতি দমন কমিশন, কার্জন হল, ফজলুল হক হলসহ এই ওয়ার্ডের বাকি এলাকাগুলো ঘুরে কোনো কর্মীকে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়নি।
উত্তর সিটির বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরেও গতকাল একই চিত্র দেখা গেছে। সকালে মশার লার্ভা ধ্বংস করার ওষুধ ছিটানো হয়নি। সকাল আটটা নাগাদ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় ডিএনসিসির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গিয়ে কাউকে পাওয়া গেল না। ওয়ার্ড কাউন্সিলর, অফিস সহকারী, মশকনিধন কার্যক্রমের তত্ত্বাবধায়ক, স্প্রেম্যান কেউ আসেননি তখনো। কাউন্সিলরের যোগাযোগ নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়। মশকনিধন সুপারভাইজার বদরুল আলম কিছু বলতে না পেরে কাউন্সিলরের কার্যালয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন। সেখানকার কর্মী আবদুল কাইয়ুম মুঠোফোনে জানালেন, ‘বৃষ্টি হচ্ছে, তাই একটু দেরি হবে। সাড়ে ৮টা কিংবা ৯টার দিকে কাজ শুরু করব।’ তবে কোন এলাকায় ওষুধ ছিটানো হবে, সেটা ঠিক বলতে পারলেন না। মুঠোফোনে স্প্রেম্যান রানা মিয়া বলেন, ‘আজকে শুক্রবার তো, তাই এখনো যাইনি। কাজ বন্ধ না, খোলা আছে। কাউন্সিলর এলে কাজের এলাকা ভাগ করবেন। বৃষ্টির কারণে দেরি হচ্ছে।’
সকাল থেকে ডিএনসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ড, ২২ নম্বর ওয়ার্ড, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড, অঞ্চল-৫ এর ২৮ নম্বর ওয়ার্ড, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড এবং ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হয়। গতকাল মশার ওষুধ ছিটানো হয়নি বলে তাঁরা জানান।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃষ্টির জন্য হয়তো অনেক এলাকায় সকালে ওষুধ ছিটানো হয়নি। শুক্রবার আমরা বন্ধ রাখি, প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করি। বিশেষ কার্যক্রম থাকলেও শুক্রবারে কাজ করা হয়। আমি অনেক জায়গায় খোঁজ নিয়েছি, বৃষ্টির জন্য তাঁরা কাজ করেননি।’