আজ শনিবার বেলা ১১টা। কাকরাইল মোড়। এখানে দেখা গেল, কিছুক্ষণ পর পর প্রাইভেট কার সিএনজি যে যার গন্তব্যে ছুটে চলছে। কিন্তু রাস্তায় মোটরসাইকেল ও বাসের দেখা মেলেনি।
কাকরাইল মোড় হয়ে প্রধান বিচারপতির বাস ভবনের সামনে কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করে দেখা গেল, রাস্তায় গাড়ি চলছে কেবল সিএনজি, প্রাইভেটকার। তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি আছে সেখানে।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনের সড়ক ধরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরের সামনে দেখা গেল, রাস্তা একেবারই ফাঁকা। গাড়ি চলছে হাতেগোনা। ফুটপাতে লোক নেই বলতে গেলে চলে।
রাত পোহালে কাল জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। যারা ঢাকার বাইরের ভোটার, তাদের অনেকেই ভোট দিতে এলাকায় গেছেন। অনেকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। তাই রাজধানী এমন ফাঁকা ফাঁকা।
শফিকুল ইসলামের বাড়ি কুড়িগ্রামে। রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকায় থেকে তিনি রিকশা চালান। আজ শনিবার সকাল থেকে মালিবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় রিকশা চালাচ্ছেন শফিকুল।
কাকরাইল মোড়ে দুপুর ১২টায় শফিকুল বলেন, তাঁর গ্যারেজের প্রায় ৪০ জন রিকশা চালক কুড়িগ্রাম চলে গেছেন ভোট দিতে। আজ রাতে শফিকুলও ট্রেনে করে এলাকায় যাবেন ভোট দিতে।
মালিবাগ মোড় কিংবা সেগুনবাগিচায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনের সড়কগুলোয় টাঙানো আছে প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টার। এ সড়কেও লোকজনের আনাগোনা কম। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সদর দপ্তরের সামনের সড়কের ফুটপাতের এক চা দোকানদার বলছিলেন, ঢাকা একেবার ফাঁকা হয়ে গেছে।
মগবাজার মোড়েও দেখা গেল, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি। এ মোড় দিয়ে কিছু লোকাল বাস চলাচল করতে দেখা যায়।
মগবাজার রেলগেটের কাছের এক চা দোকানদার বলছিলেন, ছুটি পেয়ে ঢাকা শহর ছেড়ে অনেকেই গেছেন গ্রামে। আজ ছুটির দিন হওয়ায় ঢাকায় যারা আছেন তারাও প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেন না। এ কারণে আজ ঢাকার রাস্তায় লোকজন অনেক কম।
হাতিরঝিল মোড় থেকে এফডিসির সামনের সড়কে দেখা গেল, স্থানীয় কয়েকজন কিশোর দল বেঁধে রাস্তায় সাইকেল চালাচ্ছে। অথচ ব্যস্ত এই সড়কে অন্যান্য দিন এখানে গাড়ির জট লেগেই থাকে।
সাইকেল চালানোর সময় এক কিশোরকে বলতে শোনা যায়, এমন ফাঁকা ঢাকা দেখা যায় কেবল ঈদের সময়।
যাত্রাবাড়ী হয়ে মানিকনগর এসে দেখা গেল, রাস্তার পাশে কয়েকটি মোটরসাইকেল রাখা। মোটরসাইকেল আরোহীদের গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাগণ। একই চিত্র দেখা গেল খিলগাঁও, শাহজাহানপুর, মালিবাগ ও মৌচাক মৌড়ে।
ঢাকার সড়কগুলোতে সিএনজি ও প্রাইভেটকার চলতে দেখা গেলেও মোটরসাইকেল চলছে হাতেগোনা। ঢাকার সড়কের মোড়ে মোড়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন।
ভোটের আগের দিন মধ্যরাত থেকে ভোটের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় সব ধরনের যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে । সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী , ২৯ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত ১০ ধরনের যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যানবাহনগুলোর মধ্যে রয়েছে বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন যন্ত্রচালিত যানবাহন। এ ছাড়া ২৮ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ১ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, তাঁদের নির্বাচনী এজেন্ট, পরিচয়পত্র থাকলে দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হবে। পরিচয়পত্র থাকলে সংসদ নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত দেশি ও বিদেশি সাংবাদিকের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। এ ছাড়া নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনে বৈধ পরিদর্শক এবং জরুরি কাজ, যেমন: অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কাজে ব্যবহারের জন্য যান চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।