ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহনের দাপট

নিষেধ অমান্য করে মহাসড়কে দেদার চলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা ও ভ্যান। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। গত রোববার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সানারপাড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
নিষেধ অমান্য করে মহাসড়কে দেদার চলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা ও ভ্যান। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। গত রোববার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সানারপাড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে থামছে না তিন চাকার যানবাহন চলাচল। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, মিশুক, ভ্যান, লেগুনার মতো ছোট যানবাহন। দুর্ঘটনার পাশাপাশি এতে তৈরি হচ্ছে যানজট।

সম্প্রতি ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত মহাসড়কটির প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেদার তিন চাকার যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। সাইনবোর্ড মোড় থেকে চিটাগাং রোড মোড় পর্যন্ত মাত্র তিন কিলোমিটার সড়কেই চোখে পড়েছে দেড় শতাধিক নিষিদ্ধ যান। শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত কাঁচপুর সেতুতেও ভ্যান চলাচল করতে দেখা গেছে। এসব যানবাহন একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে কখনো মাঝসড়ক দিয়ে, আবার কখনো উল্টো পথে চলাচল করছে। ফলে সড়কের শৃঙ্খলা আসছে না। হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার কারণে মহাসড়কে এসব যান চলাচল করছে বলে অভিযোগ করেছেন দূরপাল্লার বাসের চালকেরা।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে দেশের ২২টি মহাসড়কে থ্রি হুইলার (তিন চাকার যান) চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অন্যতম। তবে এই মহাসড়কে স্বপ্ল দূরত্বে চলাচলের গণপরিবহন না থাকায় এসব নিষিদ্ধ যানবাহন ব্যবহার করেন যাত্রীরা।

সম্প্রতি এক সকালে বন্দরের কেওঢালা থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশায় চড়ে মদনপুর চৌরাস্তায় আসেন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা কবির হোসেন। মহাসড়কে রিকশায় চড়া ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও কেন এসেছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘মহাসড়কের এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে যাওয়ার মতো গণপরিবহন নেই। সড়কের পাশ দিয়ে চলাচলের মতো আলাদা লেন নেই। বাধ্য হয়েই মহাসড়ক ধরে রিকশায় চলাচল করি।’

সানারপাড় থেকে চিটাগাং রোড মোড়ে উল্টো পথে আসা সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মাইদুর রহমান বলেন, একটি বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে রোগী নিয়ে আসতে হয়েছে। পুলিশ বাধা দেয় কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘হাতে ১০-২০ টাকা ধরিয়ে দিলে আর বাধা দেয় না।’

লাঙ্গলবন্ধ এলাকায় মহাসড়কের উত্তর পাশে দাঁড়ানো কয়েকজন রিকশাচালক জানান, পুলিশ ধরলে মাঝেমধ্যে রিকশার ব্যাটারি খুলে নেয় কিংবা আটক করে। তবে টাকা দিলেই আবার সেগুলো ফেরত পাওয়া যায়।

ইমরান আলী নামের এক অটোরিকশাচালক বলেন, মাসিক ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদায় মহাসড়কে রিকশা, অটোরিকশা বা লেগুনা—সবই চলতে পারে। চাঁদা দেওয়া চালকদের নির্দিষ্ট টোকেন সরবরাহ করে পুলিশ। সেসব টোকেন থাকলে নিষিদ্ধ যান মহাসড়কে চলতে বাধা নেই। তবে চাঁদা না দেওয়া যানবাহনের বিরুদ্ধে পুলিশের নিয়মিত অভিযান চলে বলেও জানান তিনি।

পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের পক্ষে এমনটা করার সুযোগ নেই। আগে কী হয়েছে জানি না। তবে আমি এখানে (কাঁচপুর হাইওয়ে থানা) যোগ দেওয়ার পর এমন কোনো ঘটনা ঘটছে না।’

ঢাকা থেকে ফেনীগামী একটি বাসেরচালক মুইজ মিয়া বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার যান ঝুঁকির কারণ। বিভিন্ন গলিপথ থেকে হুট করেই এসব যান মহাসড়কে উঠে আসে। তখন দ্রুতগতির বাস নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। দুর্ঘটনা হয় মাঝেমধ্যেই। তিনি আরও বলেন, অল্প পথ পাড়ি দেয় বলে এসব যানবাহন উল্টো পথেই যাতায়াত করে বেশি। এর ফলে সড়কে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালানো যায় না।

মহাসড়কে তিন চাকার যান বন্ধ করতে সড়কের পাশে আলাদা লেন কিংবা কম দূরত্বের পথ পাড়ি দেওয়ার মতো মানসম্পন্ন গণপরিবহন চালুর দাবি জানান নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। পুলিশের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সড়কে শৃঙ্খলা আসতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।