ঢাকার ৪ কেন্দ্রে পরিবহনশ্রমিকদের টিকা

দুই দিনে ৩৯৭ জন টিকা পেয়েছেন। আরও ৫১২ জনের তালিকা হয়েছে। জন্মনিবন্ধন সনদসহ গেলে তাৎক্ষণিক নিবন্ধন হচ্ছে।

পরিবহনশ্রমিকদের দেওয়া হচ্ছে করোনার টিকা। গতকাল সকালে রাজধানীর মিরপুরের লালকুঠির মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে।

পরিবহনশ্রমিকদের টিকা দিতে ঢাকায় চারটি হাসপাতাল নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এগুলো হচ্ছে মহাখালীতে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল, মিরপুর লালকুঠির মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, মাতুয়াইল শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। এসব কেন্দ্রের কাছাকাছি বাস-ট্রাক টার্মিনাল রয়েছে।

পরিবহনশ্রমিকদের চীনের তৈরি সিনোভ্যাক টিকা দেওয়া হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। এরই মধ্যে ৩৯৭ জন শ্রমিককে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে দেশে টিকাদান কার্যক্রমের শুরু থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস-ট্রাক টার্মিনালগুলোতে পরিবহনশ্রমিকদের টিকা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল পরিবহনমালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। এরই মধ্যে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জানুয়ারি রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা ১১ দফা নির্দেশনার একটিতে বলা হয়, সব ধরনের যানের চালক ও সহকারীদের অবশ্যই কোভিড টিকাধারী হিসেবে সনদ থাকতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহনশ্রমিকদের বিশেষ ব্যবস্থায় টিকা কার্যক্রম শুরু হয় গত বুধবার। রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে ওই দিন ২০০ শ্রমিককে টিকা দেওয়া হয়। পরদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিশেষ ব্যবস্থায় আরও ৬৭ জনের টিকা দেওয়া হয়।

শ্রমিক সংগঠনগুলো জানায়, মহাখালী টার্মিনালে এক দিন টিকা দেওয়ার পর কিছু কারিগরি জটিলতা দেখা দেয়। সেখানে টিকা রাখা কিংবা ভিড় এড়ানোর মতো ব্যবস্থা নেই। এ জন্য বাস টার্মিনালের পাশে টিকাকেন্দ্রে শ্রমিকদের বিশেষ ব্যবস্থায় টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পরিবহনশ্রমিকদের টিকাদান কর্মসূচি সমন্বয় করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বিআরটিএ সূত্র বলছে, যাঁরা টিকা নেননি, এমন শ্রমিকদের তালিকা চাওয়া হয়েছে পরিবহনমালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর কাছে। এই তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে শ্রমিকদের টিকা দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকার বাস টার্মিনালগুলো ঘিরে দুই সপ্তাহ টিকা দিলে বেশির ভাগ শ্রমিকই টিকার আওতায় চলে আসবেন।
সীতাংশু শেখর বিশ্বাস, পরিচালক (প্রকৌশল), বিআরটিএ

গাবতলী টার্মিনাল এলাকার ২০৭ জন শ্রমিককে টিকা দেওয়ার জন্য বিআরটিএতে তালিকা দিয়েছিলেন পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা। গতকাল রোববার লালকুঠি মাতৃ ও শিশু প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে ১৩০ জন টিকা নিয়েছেন। শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, পরিবহনশ্রমিকেরা বাস চালানোর এক ফাঁকে এসে টিকা নিচ্ছেন। ফলে সবাইকে একসঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে না। যত শ্রমিক আসবেন, তাঁদের লালকুঠি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। এ জন্য আলাদা একটি টিকার বুথ করা হয়েছে।

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো ৪২৫ জন শ্রমিকের তালিকা বিআরটিএতে পাঠিয়েছে। এরই মধ্যে তাদের টিকার কেন্দ্র মাতুয়াইল শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন বিআরটিএ কর্মকর্তারা। আজ পরিবহনমালিক-শ্রমিক প্রতিনিধি পরিদর্শন করে টিকা দেওয়ার সময় চূড়ান্ত করবেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার বাইরে শ্রমিকদের কীভাবে টিকার আওতায় আনা যায়, সে বিষয়ে কাজ করছেন তাঁরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় জেলায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে শ্রমিকদের বিশেষভাবে টিকা দেওয়া হবে।

শ্রমিক সংগঠনগুলোর মতে, সড়ক পরিবহন খাতে শ্রমিক প্রায় ৫০ লাখ। এর সঙ্গে যানবাহন মেরামতসহ নানা কাজে যুক্ত শ্রমিক আছেন আরও প্রায় ২০ লাখ। সব মিলিয়ে বাস, ট্রাক, অটোরিকশা, নছিমন-করিমনের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। এর মধ্যে শুধু যাত্রীবাহী বাসের শ্রমিকের সংখ্যা ১০ লাখের মতো। এসব শ্রমিকের মধ্যে কারা টিকা পেয়েছেন, আর কারা পাননি, সেই তথ্য সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে নেই। ফলে টিকা সনদধারী চালক থাকার বাধ্যবাধকতার বিষয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকদের বিশেষ ব্যবস্থায় টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পরিবহনমালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর সূত্র বলছে, তাদের কাছেও টিকা কারা নেননি, এমন শ্রমিকের প্রকৃত তালিকা নেই। এ জন্য পরিবহন কোম্পানিগুলো নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের চালক ও সহকারীদের নাম তালিকাভুক্ত করার তাগিদ দিচ্ছে। বিভিন্ন বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক শ্রমিক ইউনিয়নগুলোও তালিকা তৈরি করছে।

বিআরটিএর পরিচালক (প্রকৌশল) সীতাংশু শেখর বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, অনেক শ্রমিক আগেই টিকা নিয়েছেন। যাঁরা নেননি, তাঁদের বেছে বেছে টিকা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকার বাস টার্মিনালগুলো ঘিরে দুই সপ্তাহ টিকা দিলে বেশির ভাগ শ্রমিকই টিকার আওতায় চলে আসবেন। ঢাকার বাইরে খোঁজ নিয়ে খুব বেশি শ্রমিক পাওয়া যায়নি।