ডেথ রেফারেন্সের জন্য রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টে

আয়শা সিদ্দিকা
প্রথম আলো ফাইল ছবি

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্সের জন্য বিচারিক আদালতের রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টে এসে পৌঁছেছে।

সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান আজ রোববার এই তথ্য জানান।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর এই মামলার রায় ঘোষণা করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে আয়শা সিদ্দিকাসহ ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বাকি চার আসামি খালাস পান।

নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা। শুরুতে আয়শা এই মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন। পরে তাঁকেও আসামি করে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য পাঁচ আসামি হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম ওরফে সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয় (২২) ও মো. হাসান (১৯)।

আয়শার বিষয়ে রায়ে আদালত বলেছেন, আয়শা এই হত্যা পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা। তাঁর কারণেই রিফাতের মা-বাবা পুত্রহারা হয়েছেন। আয়শার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে তাঁকে অনুসরণ করে তাঁর বয়সী মেয়েদের বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তাই এ মামলায় তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়।

বিচারিক আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় গতকাল শনিবার প্রকাশ পায়।

গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পান আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন। এরপরই তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, রায়ের বিরুদ্ধে সাত কার্যদিবসের মধ্যে আপিলের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

আয়শার বাবা দাবি করেন, তাঁর মেয়ে নির্দোষ। রিফাত হত্যার পেছনে নয়ন বন্ড তৈরির কারিগর যারা, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক সেই প্রভাবশালীদের রক্ষায় জন্য পুলিশি তদন্তে আয়শাকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, উচ্চ আদালতে আয়শা ন্যায়বিচার পাবে।

উচ্চ আদালতে আয়শার আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার নথিপত্র পেয়েছি। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে দ্রুত আপিল করা হবে।’

জেড আই খান পান্নার ভাষ্য, এই মামলায় পুলিশের তদন্তে গাফিলতি ছিল। হত্যাকাণ্ডের সময় মাদকের বিষয়টি আলোচনায় এলেও তদন্তে সেটা আমলে নেওয়া হয়নি।

রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ড

গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজ এলাকায় দিনদুপুরে রিফাতকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করেন তাঁরই পরিচিত এক দল তরুণ। এরপর রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে যান আয়শা। হাসপাতালে নেওয়ার পর রিফাত মারা যান।

রিফাতকে যখন কোপানো হচ্ছিল, তখন তাঁর স্ত্রী আয়শা চেষ্টা করছিলেন স্বামীকে বাঁচাতে। এমন এক ভিডিও চিত্র তখন অনলাইনে ছড়িয়ে পড়লে দেশের মানুষকে নাড়া দিয়েছিল। ঘটনার ১৫ মাস পর আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, স্ত্রী আয়শাই ছিলেন রিফাত হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী।

রিফাতের ওপর আক্রমণে নেতৃত্বে ছিলেন সাব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ড। যিনি ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় এলাকায় দুর্ধর্ষ একটি সন্ত্রাসী দল গড়ে তুলেছিলেন। ঘটনার এক সপ্তাহ পর পুলিশের সঙ্গে এক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন নয়ন বন্ড। অভিযুক্ত বাকি আসামিদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ কিশোরের বিচার চলছে শিশু আদালতে।