ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্তে সব ধরনের পরীক্ষায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী নেওয়া হচ্ছে কি না, তা তদারক করতে ১০টি দল গঠন করেছে সংস্থাটি। তারা রাজধানীর সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘুরে এই কাজের তদারক করছে। পাশাপাশি এসব হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটি আলাদা কর্নার করা এবং একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্ধারণ করার বিষয়েও নজর রাখবে। সরকারি নির্দেশ না মানা হলে নাগরিকেরা অধিদপ্তরের ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩’ হটলাইনে অভিযোগ জানাতে পারবেন।
আজ সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) সানিয়া তাহমিনা। এক প্রশ্নের জবাবে সানিয়া বলেন, এবার এডিস মশার বিস্তার ও ডেঙ্গু রোগী বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগেই করেছিল এবং সে ব্যাপারে সতর্ক হতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডেঙ্গু শনাক্তে ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে কিট পাঠানো হচ্ছে। ঢাকায় প্রবেশের জায়গায়গুলো-ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, মোংলা, বেনাপোল এবং চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে জ্বরের রোগী পরীক্ষা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তারা সেখানে কিটের মাধ্যমে এনএসওয়ানের (NS1) পরীক্ষা করবে। এ ছাড়া আগত বাকি সব মানুষকে প্রচারপত্র, পোস্টার দেওয়া ও সচেতন করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ডেঙ্গু নিয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে আগামী বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ঢাকার সব স্কুল-কলেজকে অঞ্চলভেদে ভাগ করে সচেতনতামূলক প্রচারকাজ চালানো হবে। ঢাকার সব সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের নেতৃত্বে তাদের চিকিৎসক দল সব এলাকায় ও জনসমাগমের জায়গায় প্রচারকাজ করবে। অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা এই প্রচারকাজের কারিগরি সহায়তা দেবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সানিয়া তাহমিনা বলেন, এবারের মৌসুমে এডিস মশার বিস্তার ও ডেঙ্গু রোগী বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগেই করেছিল এবং সে ব্যাপারে সতর্ক হতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে চিকিৎসকদের সচেতন করতে চিঠি পাঠায়। এরপর মার্চ মাসে অধিদপ্তরের এডিস সার্ভের প্রতিবেদনে দেখা যায়, শুষ্ক মৌসুমেও যথেষ্ট এডিস মশা আছে। এ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বলা হয় এবং তা না করা হলে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে তারা যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছিল কি না, সে বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেননি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তুতির মধ্যে ছিল সচেতনতামূলক গাইডলাইন হালনাগাদ করা। সানিয়া তাহমিনা বলেন, ‘আমাদের মূল কাজ হলো চিকিৎসা দেওয়া। মানুষকে সচেতন করা এবং চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে যাতে না ছড়ায়, সে ব্যাপারে সচেতন ছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ঢাকার অবকাঠামো, জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে এডিস মশা বেড়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা না নিলে বছরের পর বছর তা বাড়তে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতন করতে নতুন করে একটি পকেট গাইডলাইন ছাপানোর কাজ করছে। ঢাকার হাসপাতালগুলোর তদারকির দায়িত্বে থাকা দলের মাধ্যমে এসব গাইডলাইন সারা ঢাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে বুলেটিন প্রকাশ করা হচ্ছে। এ ছাড়া আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ঢাকাসহ সারা দেশে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সব বিভাগীয় পরিচালক ও জেলা কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে ২ হাজার ৯২১ জন ভর্তি আছে। জানুয়ারি থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে গেছে ৮ হাজার ৭২৫ জন। গতকাল রোববার পর্যন্ত ১১ হাজার ৬৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে ৬১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম এম আকতারুজ্জামান, হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক আয়শা আক্তার।
সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে ডেঙ্গু শনাক্তের পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডেঙ্গু পরীক্ষায় রোগীদের থেকে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়, এরপর সেগুলোতে ডেঙ্গু শনাক্তের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ডেঙ্গুর মূল পরীক্ষা এনএসওয়ানের (NS1) জন্য সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা নেওয়া যাবে। অন্যদিকে আইজিজি (IgG) ও আইজিএম (IgM)—এ দুটি পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া সিবিসি (CBC) পরীক্ষার মূল্য হবে ৪০০ টাকা।