ডিমওয়ালা ইলিশে সয়লাব

মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার পর বুধবার রাত ১২টার পর থেকে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনায় নেমে পড়েছেন জেলেরা। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই জেলার বিভিন্ন মৎস্য আড়তে ও বাজারে উঠতে থাকে ইলিশ। এমনকি ভ্যান-রিকশায় করেও পাড়া-মহল্লায় বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।

এদিকে বাজারে আসা ইলিশের ৯৫ শতাংশই আকারে বড় ও ডিমওয়ালা। কম দাম পেয়ে ক্রেতারাও হুমড়ি খেয়ে কিনছেন ইলিশ। অনেকের অভিযোগ, যে হারে ডিমওয়ালা ইলিশ বাজারে আসছে, তাতে ইলিশ রক্ষার অভিযানের সফলতা প্রশ্নবিদ্ধ। তবে মৎস্য কর্মকর্তাদের দাবি, প্রচুর ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়লেও ভবিষ্যতে ইলিশ উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

গতকাল দুপুরে চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মাছঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পুরো মাছঘাট তাজা ইলিশে সয়লাব। মাছঘাটের প্রবেশপথও বন্ধ হয়ে যায় ইলিশে ইলিশে। মাছঘাটের ভেতরে প্রথম অংশের শেডে শত শত বাক্স ইলিশ দিয়ে ভর্তি করে রাখা হয়েছে। আর ভেতরে আড়তদারেরা শত শত মণ ইলিশ কেনাবেচায় ব্যস্ত।

মাছঘাটের অন্যতম বড় আড়তদার মিজানুর রহমান বলেন, ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার পর জেলেরা ব্যাপকভাবে ইলিশ মাছ ধরা শুরু করেছেন। এগুলো বিক্রির জন্য ভোর থেকে চাঁদপুর মাছঘাটে নিয়ে আসছেন। এখন ১ কেজি ওজনের ইলিশ মাত্র ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় কেনাবেচা চলছে। বরফজাত করা ইলিশের দাম আরও অনেক কম; মাত্র ৫০০ টাকা কেজি। এখন শ্রমিকেরাও ভোর থেকে কর্মব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন।

পাশের ডাকাতিয়া নদীতে চাঁদপুর ইলিশ ঘাটে একের পর এক নৌকা ইলিশ নিয়ে ভিড়ছিল। ওই ঘাটে নৌকাভর্তি ইলিশ নিয়ে আসা ইদ্রিস মিয়া নামের এক জেলে বলেন, ‘আমরা জেলেরা এবার অনেক আনন্দিত। নদীতে প্রচুর ইলিশ পাচ্ছি। কিন্তু দুঃখ একটাই—অধিকাংশ ইলিশের পেটে ডিম।’

একইভাবে গতকাল সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর, আমিরাবাদ, গজরা,  এনায়েতনগর ও সুজাতপুর এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর, মুন্সীরহাট, বরদিয়া আড়ং, মাছুয়াখাল, নায়েরগাঁও ও মতলব পৌর মাছবাজার ঘুরে দেখা যায়, ইলিশের ছড়াছড়ি। দাম কিছুটা কম হওয়ায় ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে কিনছেন। ইলিশের বেচাকেনায় সরগরম এসব মাছের বাজার। বাজারে আসা ইলিশের ৯৫ শতাংশই আকারে বড় ও ডিমওয়ালা।

প্রচুর ধরা পড়ছে ইলিশ। ব্যস্ততা বেড়েছে ঘাটে। গতকাল চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটে। প্রথম আলো

মতলব পৌর মাছবাজারের মাছবিক্রেতা বিমল দাস ও পবিত্র দাস বলেন, গত বুধবার মধ্যরাত থেকেই বাজারে প্রচুর ইলিশ আসছে। এগুলোর বেশির ভাগই এক-দেড় কেজি ওজনের। প্রায় সব ইলিশই ডিমওয়ালা। দাম আগের তুলনায় কিছুটা কম। নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে (৯ অক্টোবরের আগে) ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হতো ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকায়। ওই ওজনের ইলিশ এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকায়। দেড় কেজি বা এর বেশি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায়। এগুলো আগে বিক্রি হতো ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়।

উপজেলার নবকলস এলাকার দুজন শিক্ষক বলেন, ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হলো বুধবার মধ্যরাতে। অথচ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বাজার ডিমওয়ালা ইলিশে সয়লাব। গোটা বাজার ঘুরে ডিম ছাড়া একটি ইলিশও পাওয়া যাচ্ছে না। যে হারে বাজারে ডিমওয়ালা ইলিশ উঠছে, তাতে মা ইলিশ রক্ষার অভিযান কতটুকু সফল, তা প্রশ্নবিদ্ধ। এর ফলে ভবিষ্যতে প্রত্যাশিত ইলিশ উৎপাদন হবে কি না, সংশয় রয়েছে।

তবে মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইলিশের প্রজনন নিরাপদ ও নিশ্চিত করতে মেঘনায় ও পদ্মায় এবার কার্যকর অভিযান চালানো হয়েছে। এতে ডিমওয়ালা অধিকাংশ ছোট ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়তে পেরেছে। নানা কারণে কিছু বড় ইলিশ ডিম ছাড়েনি বা ছাড়তে পারেনি। এ কারণে নদীতে ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ছে।

একই মন্তব্য চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকীরও। তিনি বলেন, এবার অধিকাংশ ইলিশই ডিম ছেড়েছে। এখন আগামী মার্চ–এপ্রিলে জাটকা সংরক্ষণের কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। তা নিশ্চিত করা গেলেই দেশে ভবিষ্যতে আর ইলিশের আকাল হবে না।