বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহারের মাধ্যমে সাংবাদিকদের নির্বিচারে আটক, নির্যাতন এবং নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেছে। এতে করে সাংবাদিকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। এই পর্যবেক্ষণ দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিকাশ ও সুরক্ষাবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ৫০তম অধিবেশনে উত্থাপিত ‘ডিজিটাল যুগে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা জোরদার’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই আহ্বান জানান আইরিন খান। ১৮ জুন থেকে শুরু হওয়া এই অধিবেশন ৮ জুলাই পর্যন্ত চলবে।
গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আইরিন খান তাঁর ওই প্রতিবেদনে বিশ্বে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বিপজ্জনক হারে কমে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
এর ফলে বৈশ্বিকভাবে মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
প্রতিবেদনে আইরিন খান বলেছেন, একনায়কতন্ত্রের বিস্তার এবং গণতন্ত্র দুর্বল হতে থাকায় লোকরঞ্জনবাদী নেতৃবৃন্দ স্বাধীন গণমাধ্যমকর্মীদের অপরাধীতে পরিণত করার চক্রান্তে সক্রিয়ভাবে লিপ্ত। অনেক দেশের সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে শৃঙ্খলিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বিধিনিষেধ চালু করেছে।
২২ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনের মিথ্যা খবর প্রতিরোধবিষয়ক আইন অংশে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রসঙ্গটি এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, মিথ্যা সংবাদ প্রতিরোধবিষয়ক আইনগুলো নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক সনদের ১৯(৩) ধারা অনুযায়ী আইনি প্রক্রিয়া, আইনসম্মত লক্ষ্য ও প্রয়োজনীয়তার তিন স্তরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের ত্রুটিপূর্ণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কথা। অত্যন্ত কঠোর এই আইনে এমন কিছু বিধান রয়েছে, যার সংজ্ঞা ব্যাপক অর্থে অস্পষ্ট এবং শাস্তিও বেশ কঠোর। এখানে জাতীয় নিরাপত্তা, ইন্টারনেট জগতের অপরাধ, ভুল তথ্য ছড়ানো-সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে তদন্ত সংস্থাগুলোকে অনুসন্ধান, জব্দ ও বাজেয়াপ্ত করার ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।