র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও মানবাধিকার রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্ব সংলাপে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রোজিনা ইসলাম।
প্রথম আলো: সংলাপে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে কী আলোচনা হলো?
আব্দুল মোমেন: আমরা তাৎক্ষণিকভাবে যেটা মনে করেছি, সেটা হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ)
নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। আইনটির ক্ষেত্রে আগে কিছুটা অ্যাবিউজ (অপব্যবহার) হয়েছে। আর যেন না হয়, সে জন্য ডিএসএ আইনের অধীনে গ্রেপ্তার করার আগে অনুমতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আইনমন্ত্রী এটা সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র এ উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। সব দেশেই এ ধরনের আইন আছে। কিন্তু অনেক সময় আমাদের অতি উৎসাহী কিছু লোক এগুলো অ্যাবিউজ করে। এগুলো যাতে আর না হয়, সে ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত সতর্ক আছি।
প্রথম আলো: র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কী বলেছে?
আব্দুল মোমেন: যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, হঠাৎ করে তারা নিষেধাজ্ঞা তুলতে পারবে না। এটার একটি প্রক্রিয়া আছে, যা দীর্ঘ ও জটিল। আমাদের ওই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে। তবে তারা খুশি যে গত তিন মাসে র্যাবের হাতে একজন লোকও মারা যায়নি।
প্রথম আলো: গুমের অভিযোগের বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে?
আব্দুল মোমেন: গুম তো হয়েছে, কিন্তু এঁদের মধ্যে সাতজন তো বের হয়ে আসছেন। এর মধ্যে একজন তো নির্বাচনও করেছেন। তবে আরেকটি অভিযোগ রয়েছে যে গুম হওয়া ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের স্বজনদের তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। কারণ, তাঁদের কাছে কোনো তথ্য নেই, তা আগে খেয়াল করেনি। গুম হওয়াদের পরিবার কিছু বলেও না, ভয় পায়। এমন অভিযোগ আসার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের দরকার নেই। আইনমন্ত্রী বলেছেন, আপনারা চিঠি পাঠান এবং তাঁদের পাবলিক প্লেসে আসতে বলেন। যেখানে সব লোকজন থাকবে, গণমাধ্যম থাকবে। সেখানে তাঁরা তাঁদের আত্মীয়ের নিখোঁজ হওয়ার কাহিনি জানাবেন।
তবে এখানে বলে রাখি, প্রতিবছর লাখ লাখ লোক নিখোঁজ হয়, আবার ফিরে আসে। পারিবারিক কারণে বাড়ি থেকে চলে যায়। বলা হয় নিখোঁজ। সম্প্রতি একটি মামলায় দেখা গেছে, এক নিখোঁজ ব্যক্তিকে ২১ বছর পর খুঁজে পাওয়া গেছে। খুনের মামলার ওই আসামি মাওলানা সেজে ঘোরাঘুরি করছিলেন।
প্রথম আলো: যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা যাতে প্রত্যাহার করে, সে জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা কি আপনারা উল্লেখ করেছেন?
আব্দুল মোমেন: আমরা একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি বলেই গত তিন মাসে একজনও র্যাবের কারণে মারা যায়নি। পদক্ষেপ নিয়েছি বলেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
প্রথম আলো: র্যাবের জবাবদিহি নিশ্চিতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন?
আব্দুল মোমেন: র্যাবের কোনো কোনো সদস্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাড়াবাড়ির কারণে শাস্তির মুখে পড়েছেন। নানা ধরনের অভিযোগে অন্তত ২৭০ জন অফিসারের পদাবনতি হয়েছে। চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। একটি মামলায় ফাঁসিসহ র্যাব সদস্যদের নানা মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
র্যাব যখন কাউকে মারে, সেটাতে বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। তাদের (যুক্তরাষ্ট্রকে) বলেছি, র্যাব সন্ত্রাস কমায়, মানব পাচার কমায়। যে বাহিনী তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) বৈশ্বিক লক্ষ্য পূরণ করছে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা কেন দিয়েছ? আমরা তাদের বিভিন্ন দেশে মানুষ নিখোঁজ হওয়া বা গুমের তুলনামূলক চিত্র দিয়েছি। জাতিসংঘ বলেছে, বাংলাদেশে ৭৬ জন লোক নিখোঁজ হয়েছে। কিন্তু ইরাকে সাড়ে ১৬ হাজার, শ্রীলঙ্কায় সাড়ে ৬ হাজার লোক নিখোঁজ হয়েছে। বিভিন্ন দেশে গুম হচ্ছে অনেক বেশি সংখ্যায়।