ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে এটিএম বুথের সিস্টেম হ্যাকিং করে টাকা তোলার মামলায় গ্রেপ্তার ছয় বিদেশি নাগরিকের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আজ সোমবার এই আদেশ দেন।
ছয় আসামি হলেন দেনিস ভিতোমস্কি (২০), নাজারি ভজনোক (১৯), ভালেনতিন সোকোলোভস্কি (৩৭), সের্গেই উইক্রাইনেৎস (৩৩), শেভচুক আলেগ (৪৬) ও ভালোদিমির ত্রিশেনস্কি (৩৭)। আসামিরা সবাই ইউক্রেনের নাগরিক।
আদালতকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) আজ এক প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছে, সংঘবদ্ধ ডিজিটাল জালিয়াত চক্রের সদস্যরা খিলগাঁওয়ের তালতলা মার্কেটের সামনের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের সিস্টেম হ্যাক করেন। জালিয়াতির মাধ্যমে ওই বুথ থেকে টাকা তোলার সময় জনসাধারণের সহযোগিতায় দেনিস ভিতোমস্কিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ভিতোমস্কিকে সঙ্গে নিয়ে হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেন থেকে বাকি পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, এই ছয় আসামি সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্রের সদস্য। তাঁরা অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের সিস্টেম হ্যাক করেন। ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা তোলার জন্য এই আসামিরা বাংলাদেশে এসেছেন।
জালিয়াতির এই ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য আসামিদের আট দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আবেদন জানায় ডিবি।
রিমান্ড শুনানির সময় আইনজীবী এইচ এম মাসুম আদালতে হাজির ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে জানান, আসামিরা ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেননি। আদালত শুনানি শেষে প্রত্যেক আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জালিয়াতির মাধ্যমে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার অভিযোগে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ডেলিভারি চ্যানেলের হেড অব অলটারনেট মশিউর রহমান বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় গতকাল রোববার মামলা করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এই মামলা করা হয়। মামলার এজাহারে মশিউর বলেন, ‘সংঘবদ্ধ ডিজিটাল জালিয়াত চক্রটি খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথসহ আমাদের অন্যান্য বুথ থেকে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের টাকা উত্তোলন করছে।’
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ব্যাংকটির বাড্ডা বুথের দুটি এটিএম বুথ থেকে দুই বিদেশি নাগরিক বিভিন্ন কার্ড ব্যবহার করে একাধিকবার টাকা উত্তোলন করেন। বুথ থেকে একজন বের হয়ে আবারও টাকা তোলেন। এ সময় বুথে নিরাপত্তাকর্মীরাও উপস্থিতি ছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, টাকা উত্তোলনের সময় মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করেছেন তাঁরা, চোখে ছিল সানগ্লাস, মাথায় ছিল টুপি।
অভিনব এ নতুন কৌশলে টাকা চুরির ঘটনা নতুন করে চিন্তার ছাপ ফেলেছে দেশের ব্যাংকারদের মধ্যে। কারণ, এর আগে যতবারই এটিএম থেকে টাকা চুরি হয়েছে, প্রতিবারই গ্রাহকের কার্ডের তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড তৈরি করেছিলেন জড়িত ব্যক্তিরা। প্রতিবারই গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এবারের ঘটনায় পুরো এটিএম বুথের নিয়ন্ত্রণ নেন জড়িত বিদেশিরা। কীভাবে তাঁরা বুথ থেকে টাকা চুরি করলেন, তার কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও পুলিশ কর্মকর্তারা। এতে দেশের এটিএম সেবার নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, গত শনিবার সকালে বাড্ডার এটিএম বুথের টাকার হিসাব মেলানোর সময় তিন লাখ টাকা কম হয়। ওই এটিএমের দায়িত্বে ছিলেন ওরনেট গ্রুপের নিরাপত্তাকর্মী। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দুই বিদেশি কর্তৃক টাকা উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এরপর সব এটিএম বুথে নিরাপত্তা বাড়ায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। শনিবার রাতেই খিলগাঁওয়ের তালতলা এলাকায় ডাচ্-বাংলার এটিএমে টাকা চুরি করতে গেলে দুই বিদেশির একজন ধরা পড়েন। পরে আরও পাঁচ বিদেশিকে আটক করে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (পূর্ব) খিলগাঁও অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কাছে যে কার্ডগুলো পাওয়া গেছে, সেগুলো এটিএম বুথে ঢোকানোর সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাংকের কেন্দ্রীয় সার্ভারের সঙ্গে ওই বুথের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর তাঁরা নিজেদের মতো করে টাকা তুলে নিয়ে যান। এটি সম্পূর্ণ নতুন ও অভিনব পদ্ধতি। আগে কখনো এই পদ্ধতির ব্যবহার তাঁদের নজরে আসেনি।
আরও পড়ুন:
দেশে এমন জালিয়াতি কখনো দেখা যায়নি