বদলে গেছে ঢাকা আইনজীবী সমিতির ওকালতনামা। চালু হয়েছে ডিজিটাল ওকালতনামা। ঢাকার আদালতে ডিজিটাল ওকালতনামা দেওয়ার আধুনিক তিনটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকেই ডিজিটাল ওকালতনামা বিক্রি করা শুরু হয়েছে।
এই ওকালতনামায় থাকছে আইনজীবীর ছবি, সমিতিতে তাঁর সদস্য নম্বর। আরও আছে কিউআর কোড। কিউআর কোডটি স্ক্যান করলে যে কেউ তাৎক্ষণিকভাবে ওই আইনজীবীর নাম-ঠিকানা জানতে পারবেন। ওই আইনজীবী কবে বার কাউন্সিলে নিবন্ধিত হয়েছেন, সেটিও জানা যাবে।
ডিজিটাল ওকালতনামা পদ্ধতি চালুর ব্যাপারে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি গাজী শাহ আলম আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, এই পদ্ধতি চালু করার অন্যতম কারণ সংঘবদ্ধ একটি চক্র ঢাকা আইনজীবী সমিতির ওকালতনামা জাল করে আসছিল। চলতি বছরে একাধিকবার এই চক্রের সদস্যদের হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। ওকালতনামা জালিয়াতি ঠেকাতেই ঢাকা আইনজীবী সমিতি ডিজিটাল ওকালতনামা পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আইনজীবী গাজী শাহ আলম জানান, চলতি সপ্তাহে পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল ওকালতনামা দেওয়া হচ্ছে। আগামী ২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ডিজিটাল ওকালতনামা দেওয়ার বুথ উদ্বোধন করা হবে।
ডিজিটাল ওকালতনামা
ওকালতনামার মাধ্যমে একজন বিচারপ্রার্থী তাঁর পছন্দের আইনজীবী নিয়োগ দেন। এ জন্য বিচারপ্রার্থীকে ওকালতনামা কিনতে হয়। এখন থেকে বিচারপ্রার্থী ব্যক্তি ঢাকা আইনজীবী সমিতির ডিজিটাল ওকালতনামা কিনতে পারবেন ২২০ টাকায়।
ডিজিটাল ওকালতনামার ব্যাপারে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির ওকালতনামা জাল করে আসছিল একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। এতে করে সাধারণ আইনজীবীরা আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। তাই এই ডিজিটাল ওকালতনামা চালু করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেল, ঢাকার আদালত এলাকায় ডিজিটাল ওকালতনামা দেওয়ার জন্য তিনটি আধুনিক বুথ তৈরি করা হয়েছে। একটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে ঢাকা আইনজীবী সমিতির ভবনের নিচে। আরেকটি বুথ ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত (পুরোনো) ভবনের সামনে। আরেকটি বুথ নির্মাণ করা হয়েছে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) এলাকায়।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনের বুথে কর্মরত আছেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির কর্মচারী মো. পারভেজ সরদার। আজ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ডিজিটাল ওকালতনামা বিক্রি শুরু করেছেন। ওকালতনামা কিনতে হলে একজন আইনজীবী তাঁর সদস্য নম্বর বলবেন। সেই নম্বর দিয়ে কম্পিউটারে সার্চ দিলে তাঁর সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য চলে আসবে। যে কয়টি ওকালতনামা কিনতে চান, ততগুলো ডিজিটাল ওকালতনামাই সরবরাহ করা হচ্ছে।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা খুশি যে ঢাকা আইনজীবী সমিতি ডিজিটাল ওকালতনামা দেওয়া শুরু করেছে। ডিজিটাল ওকালতনামা হওয়ায় বিচারপ্রার্থী মানুষ ওই আইনজীবী সম্পর্কে সব তথ্য জানতে পারবেন। এখন থেকে জালিয়াত চক্র জাল ওকালতনামা বিক্রি করতে পারবে না। ওকালতনামা বিক্রির টাকা সরাসরি ঢাকা আইনজীবী সমিতির ফান্ডে চলে যাবে। অনেকে আইনজীবী না হয়েও ভুয়া আইনজীবী সাজেন। ডিজিটাল ওকালতনামা পদ্ধতি চালু হওয়ায় ভুয়া আইনজীবীর দৌরাত্ম্য কমবে।’
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি গাজী শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব জায়গায় যখন ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হচ্ছে, তখন আমরাও ডিজিটাল ওকালতনামা পদ্ধতি চালু করেছি। সব আইনজীবীর তথ্যসংবলিত ডিজিটাল ডেটাবেইস তৈরি করা হয়েছে।’ বর্তমানে ঢাকা আইনজীবী সমিতির নিবন্ধিত আইনজীবীর সংখ্যা ২৬ হাজার বলে জানিয়েছেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান খান।
ঢাকা আইনজীবী সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৯ সালে। ঢাকার বিচারিক আদালতগুলো পুরান ঢাকায় অবস্থিত।