জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন আজ মঙ্গলবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আগামী বছরের ১৮ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০–এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন আদালতকে বলেন, গত বছরের ২৭ জুলাই ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিক চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তখন তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ উপায়ে বৈধ পরিশ্রমের অতিরিক্ত হিসেবে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৮০ লাখ টাকা অর্জন করেন। অনুসন্ধানকালে এসব তথ্য জানা যায়। অবৈধ উপায়ে অর্জন করা এই ৮০ লাখ টাকা পার্থ গোপাল বণিক তাঁর নিজ বাসার ক্যাবিনেটে লুকিয়ে রাখেন। অনুসন্ধানকালে অভিযান করে পার্থ গোপাল বণিকের বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয়।
মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও পাচারের অভিযোগে পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৯ জুলাই মামলা করে দুদক। মামলাটি তদন্ত করে গত ২৩ আগস্ট পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি পার্থ গোপাল বণিক গত বছরের ২৮ জুলাই দুদকে হাজির হয়ে অনুসন্ধান টিমের কাছে বক্তব্য দেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে পার্থ গোপাল বণিক জানান, তাঁর বাসায় ৩০ লাখ টাকা নগদ আছে। এই টাকার বৈধ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। পরে অভিযান চালিয়ে তাঁর বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। পার্থ গোপাল বণিক ১৯৯৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। আর ২০০২ সালে তিনি জেল সুপার পদে চাকরিতে যোগ দেন। ২০১৪ সালে ১২ অক্টোবর তিনি কারা উপমহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১২ সালে বিভাগীয় মামলা হয়।
তবে তাঁকে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে তিনি চাকরিতে থেকে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেই দায়িত্ব অবহেলা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে লাখ লাখ টাকা আয় করেন। পার্থ গোপাল বণিক ২০০২ সালে চাকরিতে যোগ দিলেও তাঁর সম্পদ বিবরণীতে তিনি কোনো নগদ অর্থ দেখাননি। আয়কর বিবরণীতে জব্দ করা ৮০ লাখ টাকাও দেখাননি পার্থ গোপাল বণিক। গত ৪ নভেম্বর পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। দুদক সূত্র বলছে, পার্থ গোপাল কলাবাগানের যে ফ্ল্যাট থাকেন, সেটি তাঁর শাশুড়ি মঞ্জু সাহার নামে কেনা।
পার্থ গোপালের দাবি, ফ্ল্যাটটি তাঁর শ্যালিকা কিনে দিয়েছেন। তবে বাড়ির মালিক দুদককে নিশ্চিত করেছেন যে ফ্ল্যাটটি কিনেছেন পার্থ নিজেই।
দুদক সূত্র জানায়, পার্থ গোপালের পরিবার যে গাড়ি ব্যবহার করে, সেটি তাঁর এক বন্ধুর নামে কেনা। নিকেতনে একটি ফ্ল্যাট আছে পার্থ গোপালের মায়ের নামে। দুদকের অভিযানের সময় জব্দ টাকার মধ্যে ৩০ লাখ শাশুড়ির বলে দাবি করেছিলেন পার্থ গোপাল। ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে সেগুলো বাসায় রাখা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও এ-সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি তিনি।