ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অর্ধেকের বেশি মানুষ জানেনই না যে তাঁরা এই রোগে আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, সাধারণত ৩০ বছরের বেশি বয়সীদের টাইপ-২ (শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি থাকে) ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। খাদ্যাভাসে পরিবর্তন ও নিয়মিত শরীরচর্চা করলে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ ধরনের ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি সচেতনতা। আর এ কাজে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন নার্সরা।
ডায়াবেটিস দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য, ‘ডায়াবেটিস সেবায় পার্থক্য আনতে পারেন নার্সরাই’। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, নার্সরা সঠিক প্রশিক্ষণ পেলে রোগীকে ডায়াবেটিস সম্পর্কে ভালো ধারণা দিতে পারবেন। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে চাইলে সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, ডায়াবেটিস হলে ক্লান্তি, অবসন্নতা, ওজন হ্রাস, পিপাসা ও ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাবের লক্ষণ দেখা দেয়। ডায়াবেটিসের কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা, হৃদ্রোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন খাবার এড়িয়ে চলা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে ডায়াবেটিস থেকে দূরে থাকা যায়।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, দেশে হৃদ্রোগ, ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ, ডায়াবেটিস—এসব সংক্রামক রোগের প্রকোপ বাড়ছে। চলতি বছরের শুরুতে জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষ ১ কোটি ১০ লাখ। ১৮-৩৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এই সংখ্যা ২৬ লাখ। আর ৩৫ বছর ও এর চেয়ে বেশি বয়সীদের মধ্যে ৮৪ লাখ। প্রায় ৬০ শতাংশ নারী ও পুরুষ জানেনই না যে তাঁরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্বজুড়ে ১৪ নভেম্বর (আজ শনিবার) ডায়াবেটিস দিবস পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। অনুষ্ঠানে ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের করোনা হলে তা হবে মারাত্মক এবং যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে তা আরও মারাত্মক। এই ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ বলেন, টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রায় ৭০ ভাগ প্রতিরোধযোগ্য।
শুধু ডাক্তারের একক চেষ্টায় ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্ভব নয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। তিনি বলেন, এই রোগ প্রতিরোধে রোগী ও তাঁর পরিবারকে সচেতন হতে হবে।
ডায়াবেটিসের সঙ্গে ধূমপানের সম্পর্ক আছে জানিয়ে দন্ত্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, তরুণ যাঁরা ধূমপায়ী, তাঁদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
ডায়াবেটিক সমিতি জানিয়েছে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রতি ১০০ নারীর মধ্যে ১০ জন গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। যাঁদের ৬৫ শতাংশ পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে পড়েন।
চিকিৎসকেরা বলছেন, উদ্যোগী হলে নার্সরা ডায়াবেটিস সেবায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারেন। রক্ত পরীক্ষা, ইনসুলিন দেওয়াসহ নার্সরা যদি রোগীকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশলগুলো শিখিয়ে দিতে পারেন, তাহলে ডায়াবেটিস সেবায় ব্যাপক পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা আছে। তবে দেশে নার্সের স্বল্পতা আছে। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনও নার্স স্বল্পতার কথা বলেছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সারা বিশ্বে পায় ৬০ লাখ নার্সের স্বল্পতা রয়েছে।