ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ‘খুবই প্রত্যাশিত’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও পদাধিকারবলে ডাকসুর সভাপতি মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, ‘ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব মহলের আন্তরিক সহযোগিতা থাকা যেমন প্রত্যাশিত, তেমনিভাবে পুরো জাতীয়ভাবেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার একটি সংস্কৃতিও আরও শক্তিশালী করা জরুরি।’
আজ শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে অবস্থিত আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চ্যুয়াল শ্রেণিকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষে ‘মিট দ্য প্রেস’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘নেতৃত্ব ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করার জন্য এগুলো ভূমিকা রাখে৷ কারণ, দীর্ঘ তিন দশক পর যখন ডাকসু নির্বাচন হলো, কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ মিলিয়ে সাড়ে তিন শর বেশি বিদগ্ধ ও বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ শিক্ষার্থী বিভিন্ন নেতৃত্বের পর্যায়ে কাজ করেছেন। বিভিন্ন কাজ ও মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাঁদের অনেক দক্ষতা অর্জনের সুযোগ হয়েছে।’
উপাচার্য বলেন, ডাকসু নির্বাচন খুবই প্রত্যাশিত একটি বিষয়। এটি আয়োজনের জন্য সব মহলের আন্তরিক সহযোগিতা থাকা যেমন প্রত্যাশিত, তেমনিভাবে পুরো জাতীয়ভাবেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার একটি সংস্কৃতিও আরও শক্তিশালী করা জরুরি। এটি অনেক সময় বড় আকারের ধাক্কা খায়। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই এ ধরনের বড় কর্মপ্রয়াস গ্রহণ করতে হয়।
২০১৯ সালের ১১ মার্চ ডাকসু ও হল সংসদের সর্বশেষ নির্বাচন হয়। ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙে হওয়া এই নির্বাচনে ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫ পদের ২৩টিতেই জয় পায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। শুধু ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে জয় পান ছাত্র অধিকার পরিষদের নুরুল হক ও আখতার হোসেন। সে বছরের ২৩ মার্চ দায়িত্ব নেন ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। গত বছরের ২২ মার্চ নির্ধারিত ৩৬৫ দিনের মেয়াদ পূর্ণ করার পর ২২ জুন গঠনতন্ত্রে থাকা অতিরিক্ত ৯০ দিনও অতিক্রম করে ডাকসুর কমিটি। ২৩ জুন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ভেঙে যায় সেই কমিটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের ‘বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আগামী ১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। এই অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী লোটে শেরিং অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন। উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান এতে সভাপতিত্ব করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শতবর্ষের তথ্যচিত্র ও ‘থিম সং’ পরিবেশন করা হবে। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত গ্রন্থ, ফটোগ্রাফি অ্যালবাম ও ওয়েবসাইট উদ্বোধন করবেন। ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন। স্বাগত বক্তব্য দেবেন সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও শতবর্ষ উদ্যাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সদস্যসচিব এ এস এম মাকসুদ কামাল। কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতির হাতে বিশেষ স্যুভেনির তুলে দেবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সেদিন বিকেল চারটায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আলোচনা সভা ও সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় খ্যাতিমান শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। ২, ৩ ও ৪ ডিসেম্বর বিকেল চারটায় খেলার মাঠে আলোচনা সভা এবং সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।
এসব আলোচনা সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, শিক্ষাবিদ, গবেষক ও সাবেক শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন বলে জানান উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। প্রথিতযশা শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ ও নৃত্যকলা বিভাগের শিল্পী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেবেন। আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে খেলার মাঠে কনসার্টের মধ্য দিয়ে এই উৎসবের সমাপ্তি হবে।