দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ব্যাপারে অভিযোগ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাহায্য চেয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা। তাঁর এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেছেন, এসব পুরোপুরি মিথ্যা, ভিত্তিহীন। নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো উদ্দেশ্য আছে। আর তিনি যে বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া ও জমি কেড়ে নেওয়ার কথা বলেছেন, সেটা কোথায় হয়েছে, বলুক। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার গতকাল বিকেলে রাজধানীর মেরুল বাড্ডা বৌদ্ধমন্দিরে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, প্রিয়া সাহার অভিযোগ ঠিক নয়।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর আয়োজিত ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে যাওয়া বিভিন্ন দেশের অন্তত ২৭ জন প্রতিনিধিকে গত বুধবার তাঁর ওভাল অফিসে ডেকে পাঠান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রিয়া সাহা।
মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানে ৩ কোটি ৭০ লাখ (৩৭ মিলিয়ন) হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান উধাও হয়ে গেছেন। এখনো সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ (১৮ মিলিয়ন) সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী রয়েছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা আমার ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। জমি কেড়ে নিয়েছে। এর কোনো বিচার এখনো পাইনি।’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তখন তাঁর কাছে জানতে চান, কারা এসব করেছে। প্রিয়া সাহা বলেন, উগ্রপন্থী মুসলমানরা এটা করেছে। সব সময় রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় তারা এটা করে থাকে।
এদিকে প্রিয়া সাহা কেন ট্রাম্পের কাছে এ অভিযোগ করেছেন, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রিয়া সাহা যে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন, সেটা আমরা মিডিয়ার কাছ থেকে জেনেছি। তিনি আমাদের যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ওই সমাবেশে যাওয়ার কথা জানাননি। তা ছাড়া ওই সম্মেলনে সংগঠনের তিন সদস্যের যে প্রতিনিধিদল গেছে, তাতে তিনি অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। এখন “ডিজঅ্যাপিয়ার” শব্দটি বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’
রানা দাশগুপ্ত বলেন, পাকিস্তানের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী’ ৪৭-এর দেশভাগের পর অবিভক্ত পাকিস্তানে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ছিল ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ।’ ৭১ সালের পর তা কমে ১৯ থেকে ২০ শতাংশে নেমে আসে। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১১ সালের সর্বশেষ জরিপে ওই হার ৯ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনীতিতে একে বলা হয় মিসিং পিপল আর বাংলায় একে নিরুদ্দিষ্ট বা হারিয়ে যাওয়া জনগোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করা হয়।