লক্ষ্য বিশ্ব রেকর্ড

টিমবিডিসির ১৬০০ কিমির রাইড আজ শুরু

দ্রাবিড় আলম
দ্রাবিড় আলম

গিনেস বুকে নাম লেখাতে আজ বুধবার থেকে ছুটবেন টিমবিডিসির তুখোড় সাইক্লিস্টরা। রাত আটটায় রাজধানীর পূর্বাচলে জয়নুল আবেদিন চত্বরে শুরু হবে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার রাইড। রিলে করে চার সাইক্লিস্ট ৪৮ ঘণ্টায় ওই পথ পাড়ি দেবেন। ব্যাটন হাতে শুরুটা করবেন টিমবিডিসির দ্রাবিড় আলম।

ব্যক্তিজীবনে দ্রাবিড় একজন ব্যবসায়ী। শুরু থেকেই বিডিসাইক্লিস্টসের (বিডিসি) সঙ্গে আছেন। একসময় বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে ফান রাইডে যেতেন। পরে রোডবাইক নিয়ে নামেন এবং একটু জোরেশোরে চালাতে একটা টিম গঠন করেন। নাম দেন টিমবিডিসি; বিডিসিরই স্পোর্টস উইং। টিমবিডিসির জার্সি গায়ে দ্রাবিড় দেশ-বিদেশে সাইকেল চালিয়েছেন বহুবার। যোগ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। গত বছর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছেন।

আজ রাত আটটায় পূর্বাচলে দ্রাবিড়কে দিয়েই শুরু হবে রেকর্ড গড়ার খেল। শুরুতে দ্রাবিড় ১ দশমিক ৭ কিলোমিটারের চৌকোণাকৃতির একটি জায়গা চক্কর দেবেন ৩০ মিনিট ধরে। তারপর একে একে আসবেন তানভীর আহমেদ, রাকিবুল ইসলাম ও মো. আলাউদ্দীন। সবাই ৩০ মিনিট করে চালাবেন। মূল রাইড শুরু হবে এর পর থেকে। প্রত্যেকে এক ঘণ্টা করে চালাবেন। একজনের পর একজন চক্করের পর চক্কর দেবেন ওই রাস্তায়। গিনেস রেকর্ড করতে দেড় হাজার কিলোমিটার চালালেই চলে। কিন্তু টিমবিডিসির এই চার তরুণ চালাবেন ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার। এ জন্য পূর্বাচলের ওই রাস্তায় ৯৪১টি চক্কর দিতে হবে তাঁদের।

রাকিবুল ইসলাম

সাইকেল নিয়ে গিনেস রেকর্ড করার এই যজ্ঞে শামিল হতে চারজনকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। টানা তিন মাস কঠোর অনুশীলন করতে হয়েছে তাঁদের, বললেন রাকিবুল। দলের সদস্যদের অনুশীলন ও প্রশিক্ষণের দায়িত্বটা তাঁর কাঁধেই ছিল। এভারকেয়ার হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট ছিলেন। সেই চাকরি ছেড়ে এখন পুরোদস্তুর সাইক্লিং নিয়ে আছেন। ফিটনেস কোচ হিসেবেও কাজ করছেন। দেশ-বিদেশে সাইক্লিং নিয়ে বেশ কিছু প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। পেয়েছেন স্বর্ণপদক।

রিলে করে সাইকেল কীভাবে চালাবেন জানতে চাইলে তানভীর বলেন, ‘ধরুন, একজন শুরু করল। সে এক ঘণ্টা চালাল। পরে আরেকজন আসবে। এভাবে একের পর এক চলতে থাকবে টানা ৪৮ ঘণ্টা। এর মধ্যেই ফাঁকে ফাঁকে একেকজন ঘুম, খাওয়াদাওয়া সেরে নেবে।’

তানভীর আহমেদ

একা একা সাইকেল চালানো তো ক্লান্তিকর! এমন মন্তব্য শুনে মুচকি হেসে তানভীর বললেন, সে জন্য সহায়তাকারী হিসেবে পেসাররা থাকবেন। গিনেস কর্তৃপক্ষের নিয়ম মেনে পেসাররা সময় সময় এই চার সাইক্লিস্টের সঙ্গে এসে সাইকেল চালাতে পারবেন। সামনেও থাকতে পারবেন। এতে একা একা সাইকেল চালানোর ক্লান্তি দূর হবে। আর সামনে থেকে ধেয়ে আসা বাতাস থেকে রেহাই মিলবে। গোটা প্রতিযোগিতা সম্পন্ন করার জন্য মোট ৩৬ জন পেসার খুঁজছে টিমবিডিসি, জানালেন তানভীর।

তানভীর আহমেদ পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। ভি টু টেকনোলজিসে আছেন। পুরোদস্তুর চাকরিজীবী। সপ্তাহান্তে সাইক্লিং করেন নিয়ম মেনে। তবে এ প্রতিযোগিতায় টিকতে খাটতে হয়েছে তাঁকে, গা থেকে প্রচুর মেদ ঝরাতে হয়েছে। পাঁচ কেজি ওজন কমিয়েছেন।

সাইক্লিস্টরা এমনিতেই অনেক গ্যাজেট ব্যবহার করেন। ৪৮ ঘণ্টার এই রাইডে প্রচুর গ্যাজেট ব্যবহার করবেন চার সাইক্লিস্ট। গোটা রাইডের হিসাব-নিকাশ কষবে জিপিএস বাইক কম্পিউটার, হৃৎকম্পন মাপার জন্য থাকবে ছোট মনিটর, প্যাডেল ঘুরিয়ে কী পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হচ্ছে, তা মাপার জন্য থাকবে ছোট্ট পাওয়ার মিটার। কত চক্কর হলো গোনার জন্য থাকছে আরএফআইডি টাইমিং সিস্টেম। আর প্রচুর ক্যামেরা তো থাকবেই। যে সাইক্লিস্ট যখন রাইডে থাকবেন, তাঁর সঙ্গে থাকবে একটি ব্যাটন। ব্যাটনটিতে পাওয়ার ব্যাংকসহ দুটি জিপিএস ট্র্যাকার লাগানো থাকবে।

মো. আলাউদ্দীন

রাইডে শরিক হওয়া অপর সাইক্লিস্ট মো. আলাউদ্দীন। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে সাইকেল এসওএস বিডি নামে একটি দোকান আছে তাঁর। ২০১৭ সালে ভারতে সাইকেল চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন আলাউদ্দীন। বাঁ পায়ের হাড়ে ফাটল ধরেছিল। সে ধকল কাটিয়ে উঠেছেন। কিন্তু বেশি চাপ পড়লে এখনো পায়ে ব্যথা পান।

চারজন মিলে রেকর্ড গড়বেন ঠিকই। কিন্তু তাঁদের পেছনে দুই দিন ধরে থাকবে ৮০-১০০ জনের বড়সড় একটা দল। সে দলে বিচারক থেকে শুরু করে পেসার, স্বেচ্ছাসেবকেরা থাকবেন। টিমবিডিসির সদস্যরা এ কাজে বড় রকমের সহায়তা পেয়েছেন তাঁদের পৃষ্ঠপোষক ডাবরের কাছ থেকে। আর সহযোগিতায় আছে প্রথম আলো ডটকম।