‘তিন বছর আগে সৌদি আরবে যাই। এবারই বাড়ি আসছি। ঝামেলা যেন না হয়, তার লইগ্যা সৌদি এয়ারলাইনসের রিটার্ন টিকিট কাইটা আইসি। এখন টিকিটও পাইছি না, যাইতেও পারতাসি না। টিকিটের আশায় রাত কাটাই মগবাজার ফ্লাইওভারের নিচে।’- হোটেল সোনারগাঁওয়ের সামনে আক্ষেপ নিয়ে গতকাল সোমবার কথাগুলো বলছিলেন সৌদিপ্রবাসী আবদুল কাদের।
আবদুল কাদের প্রথম আলো বলেন, ‘আমি লেখাপড়া জানি না। কিছু বুঝিও না। টিকিট, পাসপোর্ট নিয়ে যার কাছেই জানতে চাই, সেই নানান কথা কয়। আসল কাজ কিছুই হয় না।’
শরীয়তপুর জেলার সখীপুর উপজেলায় আবদুল কাদেরের গ্রামের বাড়ি। লেখাপড়া করেননি। গ্রামের বাড়িতে মা, স্ত্রী ও সন্তান রয়েছেন। উপার্জনের আশায় আপনজনদের রেখে বছর তিনেক আগে সৌদি আরবে যান। সেখানে একটি দোকানে কাজ করেন। করোনা মহামারি ছড়িয়ে যাওয়ার আগে ছুটি কাটাতে গত ২২ জানুয়ারি দেশে আসেন আবদুল কাদের। ছুটি কাটিয়ে সৌদি আরব ফিরে যাওয়ার সময় ছিল ১৭ এপ্রিল। কিন্তু তত দিন সব লকডাউন। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়েছে যায়। এর মধ্যে ভিসার মেয়াদও শেষ হয় আবদুল কাদেরের। বাড়িতে বসে দিন কাটতে থাকে। আর ধারদেনায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৫ সেপ্টেম্বর সৌদি আরব তাদের দেশে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
ঢাকা থেকে ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সৌদি এয়ারলাইনস। তাই প্রবাসের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার আশা জাগে আবদুল কাদেরের। অনেক প্রবাসীর মতো তিনিও গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় কারওয়ান বাজারে সৌদি এয়ারলাইনসের কার্যালয়ের সামনে আসেন। তবে টোকেন মেলেনি। এদিকে ৩০ সেপ্টেম্বর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। সৌদি এয়ারলাইনস থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর আসতে বলা হয় আবদুল কাদেরকে। তারও টিকিটের আশায় ঢাকা ছাড়েননি। নিকটাত্মীয় কেউ না থাকায় মগবাজার উড়ালসড়কের (ফ্লাইওভার) নিচে, কখনো ফার্মগেট পদচারী সেতুর ওপর রাত কাটান। ভোর হতে না হতেই আবার চলে যান কারওয়ান বাজারে সৌদি এয়ারলাইনসের কার্যালয়ে সামনে।
আবদুল কাদের বলেন, ’২৪ সেপ্টেম্বর টোকেন নিতে গেলে সৌদি এয়ারলাইনসের অফিসে মাইকে ঘোষণা দেয় ২৯ সেপ্টেম্বর টোকেন নিতে হইব। তখন বাড়ি ফিরা যাই। ২৯ তারিখ আইসা শুনি ২৮ সেপ্টেম্বর টোকেন দিসে। পরে কফিল আমার ভিসার মেয়াদ এক বছর বাড়াইছে। এখন কইতাসে ১০ দিনের মধ্যে সৌদি যাইতে। না গেলে চাকরি বাদ। তাই টিকিট না নিয়া ফিরুম না। হের লইগা ২০ টাকায় লম্বা পলিথিন কিনসি। হেইডা বিছাইয়া এফডিসির পাশে ফ্লাইওভারের নিচে ঘুমাই। কখনো ফার্মগেট ওভারব্রিজে থাকি।’
আবদুল কাদেরের মতো আরও কয়েকজন আজ কারওয়ান বাজারে সৌদি এয়ারলাইনসের কার্যালয়ে টিকিট রি-ইস্যু করাতে এসেছেন। তবে আবদুল কাদের ভেতরে যেতে পারেননি। এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করছেন। তখনো টিকিট পাননি। তবে এদিন আর অনেকের টিকিট পাওয়া নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি। সড়ক অবরোধ বা মিছিল করেননি সৌদিপ্রবাসীরা। ভিসার মেয়াদ যাদের কম, তাদের আগে টিকিট রি-ইস্যু করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩০০ নম্বর থেকে ৮০০ নম্বরের টোকেনধারীদের টিকিট দেওয়া হয়েছে। দুটি আলাদা লাইন থেকে সৌদিপ্রবাসীরা সিরিয়াল অনুযায়ী সৌদি এয়ারলাইনসের কার্যালয়ে ঢুকে টিকিট সংগ্রহ করছেন।
নোয়াখালী থেকে মোতালেব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৭ সেপ্টেম্বর টিকিট নিতে আসছিলাম। তখন আমার ভিসার মেয়াদ ছিল না। পরে সৌদি আরবে কফিল আমার ভিসা ও ইকামার মেয়াদ দুই মাস বাড়িয়েছে। আজ সকাল ১১টায় সৌদি এয়ারলাইনসের অফিসে আসছি। লাইনে ঝামেলা হয়নি। বিকেল সাড়ে তিনটায় টিকিট পাইসি। ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় ফ্লাইট। অহন করোনা টেস্ট করামু।’
এদিকে মতিঝিলে বিমান কার্যালয়ে রিটার্ন টিকিটধারীদের টিকিট রি-ইস্যু করা হয়। এখান থেকেও যাদের ভিসার মেয়াদ কম, সেই সব সৌদিপ্রবাসীকে আগে টিকিট দেওয়া হয়।