বাসা থেকে টাকা লুট করতেই চীনা নাগরিক ব্যবসায়ী গাও জিয়াং হুইকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গাও জিয়াং হুই বনানীর যে বাড়িতে থাকতেন, ওই বাড়ির দুই নিরাপত্তাকর্মীকে গত মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে লুট হওয়া ১ লাখ ২১ হাজার টাকা এবং হত্যায় ব্যবহৃত গামছা, বালতি ও কাঠের টুকরা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নিরাপত্তাকর্মী আবদুর রউফ ও ইনামুল হক। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের মিডিয়া সেন্টারে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সংবাদ সম্মেলেন এসব তথ্য জানান ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল বাতেন। সেখানে গাও জিয়াংয়ের স্ত্রী লিও হুই, তাঁদের দুই ছেলেমেয়ে, ভাই ও চীনা দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ইয়াং জিপিং উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লিও হুই স্বামীর জন্য বিলাপ করে কাঁদেন।
সংবাদ সম্মেলনে আবদুল বাতেন বলেন, ১০ ডিসেম্বর বিকেলে বনানীর ২৩ নম্বর রোডের এ ব্লকের ৮২ নম্বর বাড়ির পেছনের খালি জায়গায় চীনা নাগরিক গাও জিয়াং হুইর মাটিচাপা দেওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি ওই বাড়ির ছয়তলায় একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। তাঁর গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় করা মামলার তদন্তভার পায় ডিবির উত্তর বিভাগ। বাড়ির ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) অচল থাকায় কোনো ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়নি। পুলিশ ওই অবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী রউফ ও ইনামুলকে শনাক্ত করে। গত মঙ্গলবার রাতে বনানীর ৮২ নম্বর বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, নিরাপত্তাকর্মী রউফ ও ইনামুল বাড়ির ছাদের চিলেকোঠায় থাকতেন। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা বলেন, তাঁদের মধ্যে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানোর ভাবনা জাগে। একপর্যায়ে রউফ ইনামুলকে বলেন, চীনা নাগরিক গাও জিয়াং বড় ব্যবসায়ী। তিনি অনেক টাকাপয়সা নিয়ে চলেন এবং ফ্ল্যাটে একাই থাকেন। তাঁকে পৃথিবী থেকে বিদায় দিতে পারলে জীবনে কিছু করা যাবে। এরপর তাঁরা দুজন গাও জিয়াংকে হত্যার পরিকল্পনা নেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৬ ডিসেম্বর গাও জিয়াংয়ের বাসার ডোর বেল বাজান তাঁরা। কিন্তু দরজা না খোলায় তাঁরা চলে যান। পরে ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর তাঁরা দুজন আবার গিয়ে গাও জিয়াংয়য়ের বাসার বেল চাপেন। গাও জিয়াং দরজা খুলে তাঁদের দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকান। গাও জিয়াং বাংলা ও ইংরেজি ভাষা জানতেন না। তখন গাও ইশারায় জানতে চান। এ পর্যায়ে ইনামুল ‘ওয়াটার’ ‘ওয়াটার’ বলে ইঙ্গিত করেন। ইনামুল সঙ্গে করে আনা গামছা দিয়ে গাওয়ের গলা পেঁচিয়ে ধরেন। এ সময় রউফ কোমরের দিকে জাপটে ধরেন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে গাও জিয়াং রউফের বৃদ্ধাঙ্গুলে কামড় দেন। একপর্যায়ে গাও জিয়াংয়ের নাক–মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে যায়। তাঁরা দু–তিন মিনিটের মধ্যে গাওয়ের মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর ড্রয়িংরুমে থাকা ল্যাপটপ, একটি ছোট ব্যাগে থাকা তিন লাখ টাকা, কিছু খুচরা টাকা এবং গাও জিয়াংয়ের মুঠোফোন লুট করেন। তাঁরা গাওয়ের লাশ ড্রয়িংরুমে নিয়ে রক্ত গামছা দিয়ে মুছে ফেলেন এবং ছাদে চলে যান। সেখানে গোসল করে দুজন একসঙ্গে বের হন। এরপর রউফ নেন ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা এবং ইনামুলকে দেওয়া হয় ১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা।
ডিএমপির এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, রউফ বনানী সুপার মার্কেটের আশপাশে থাকা তিনটি বিকাশে নড়াইলে তাঁর বন্ধু হাসানের কাছে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন এবং ইনামুল চারটি বিকাশ নম্বরে তাঁর গ্রামের (ঝিনাইদহ) এক ভাই, বন্ধু ও দুই ভাবির কাছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন।
রাত ১১টার দিকে রউফের ডিউটি শুরু হলে তিনি বাড়ির পেছনে কাঠ দিয়ে মাটি খোঁড়েন। পরে তিনি গাও জিয়াংয়ের লাশ লিফটে নামিয়ে মাটিচাপা দেন। পরে বালতির পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দেন। পরদিন সকালে গৃহকর্মী বাসায় এসে গাও জিয়াংয়ের ফ্ল্যাটটি খোলা পান। সেখানে ঢুকে খোঁজাখুঁজি করে গাও জিয়াংকে পাননি। তবে গাও জিয়াংয়ের ব্যবহৃত স্যান্ডেলে রক্তের দাগ দেখতে পান। পরে গৃহকর্মী ও গাড়িচালক সুলতান আহমেদ বাড়ির পেছনে গিয়ে পা ও চুল বেরিয়ে থাকতে দেখে বনানী থানায় খবর দেন। বনানী থানার পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর গাও জিয়াংকে শনাক্ত করা হয়। গাও জিয়াং বনানীর বাড়িটিতে এক বছর থাকতেন। তিনি চীন থেকে পাথর ও নির্মাণসামগ্রী আমদানি করে পদ্মা সেতু ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে সরবরাহ করতেন।