আগরতলা-ঢাকা আন্তর্জাতিক সড়ক

ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে দেড় বছর ধরে চলছে যান

ঢাকা-আগরতলা আন্তর্জাতিক সড়কের আখাউড়া উপজেলার আবদুল্লাপুর গাজীরবাজার এলাকায় জাজি নদীর ওপর ‍ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা-আগরতলা আন্তর্জাতিক সড়কের আখাউড়া উপজেলার আবদুল্লাপুর গাজীরবাজার এলাকায় জাজি নদীর ওপর ‍ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু।  ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা-আগরতলা আন্তর্জাতিক সড়কের আখাউড়া উপজেলার আবদুল্লাপুর গাজীরবাজার এলাকার জাজি নদীর ওপর ‍ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু দিয়ে চলছে যান। দীর্ঘ দেড় বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতু মেরামতে সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। সেতুর কোনো পাশে নেই সতর্কতামূলক সাইনবোর্ডও।

সেতুর মধ্যের পিলারটি মেরামতের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ শামসুজ্জামান সওজের জেলা কার্যালয়ে তিনবার চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ এই স্টিলের সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচলের সময় তীব্র শব্দ হয়। এ কারণে সেতু-সংলগ্ন আবদুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

আখাউড়া উপজেলা প্রশাসন ও স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের আগস্টে টানা বর্ষণ ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার দক্ষিণ, মনিয়ন্দ এবং মোগড়া ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পাশাপাশি পানির তীব্র স্রোতে ওই বেইলি সেতুর মধ্যের পিআর (নিচের বিম) সরে যায়। তখন উপজেলা প্রশাসন ও সওজ কর্তৃপক্ষ সেতুর ওপর দিয়ে ১০ টনের বেশি ওজনের যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরে ভারসাম্য রক্ষার জন্য সেতুর মধ্যের ক্ষতিগ্রস্ত পিলার ও পাটাতনের মধ্যে সওজের পক্ষ থেকে কাঠ বসানো হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পিলারের দুই থেকে তিন গজ দূরে একটি অস্থায়ী স্টিলের পিলার বসানো হয়। সেতুর মধ্যের পিলারটি থেকে কাঠ ও অন্যান্য অংশ সরে পড়েছে এবং গাড়ি উঠলেই সেতুটি কাঁপে। দেড় বছর ধরে সেতুটি ওই অবস্থায় রয়েছে।

এই বেইলি সেতু অতিক্রম করেই আখাউড়া স্থলবন্দরে যেতে হয়। আর কোনো বিকল্প সড়ক নেই। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় স্থলবন্দরে যাতায়াত করা পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সেতুটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমদানি-রপ্তানিসহ আখাউড়া স্থলবন্দরের অন্যান্য সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আখাউড়া স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে তুলা, ফার্নিচার, প্লাস্টিক, পাথর, সিমেন্ট, মাছসহ আরও অনেক পণ্য ট্রাকে করে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আগরতলায় রপ্তানি করা হয়। প্রতিদিন এসব পণ্যবাহী ১৫-২০টি ট্রাক এই বেইলি সেতু অতিক্রম করে আগরতলায় যায়। তাছাড়া এই বন্দর দিয়ে দুই বাংলার তিন শতাধিক যাত্রী আসা যাওয়া করেন। যাত্রীবাহী বাসও আসা-যাওয়া করছে। পাথর বহনকারী ট্রাকের ওজন ১৫-২০ টন আর সিমেন্ট বহনকারী ট্রাকের ওজন ২৫-৩০ টন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, গাজীরবাজার আবদুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণে জাজি নদীর ওপর এই বেইলি সেতুর মধ্যে ইট-সিমেন্টের পিলারটি দক্ষিণ দিকে হেলে রয়েছে। এর পাশে দেওয়া হয়েছে অস্থায়ী স্টিলের পিলার। ভারসাম্য ধরে রাখার জন্য দক্ষিণ দিকে স্তম্ভের ওপর কাঠ এবং অনেকগুলো স্টিলের টুকরা রাখা হয়েছে। সেতুর পাটাতন এবং স্তম্ভের ওপর রাখা কাঠ ও স্টিলের মধ্যে ফাঁক রয়েছে। এই স্তম্ভ থেকে দুই-তিন গজ দূরে থাকা অস্থায়ী স্টিলের পিলারটিও পাটাতনের সঙ্গে সংযুক্ত নয়। সেখানেও ফাঁক রয়েছে। সেতুর ওপরে ভারী যান উঠলেই কম্পন ও শব্দের সৃষ্টি হচ্ছে এবং মধ্যের পাটাতন দেবে যাচ্ছে।

সেতু-সংলগ্ন আবদুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাহমিদা সুলতানা ও প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিন বলেন, সেতুর ওপর ট্রাক বা বাস উঠলেই শব্দ হয়। সারা দিনই এই উচ্চ শব্দ সহ্য করতে হয়। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটছে। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে ট্রাকসহ এই বেইলি সেতু একবার ভেঙে পড়েছিল। এখন যে অবস্থা, যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে পড়তে পারে।

ট্রাকচালক মনি লাল শাহ ও রফিক মিয়া বলেন, গাড়ি উঠলেই সেতু কাঁপতে থাকে। সেতুর মধ্যের পিলারটি যেকোনো সময় সরে গিয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বন্দর দিয়ে প্রতিদিনই ১৫ থেকে ৩০ টন ওজনের ট্রাক এপার থেকে ওপারে এবং ‍ওপার থেকে এপারে আসা-যাওয়া করে। ৩০০-৪০০ যাত্রী আসা-যাওয়া করে। বন্দরে আসার এবং বন্দর থেকে আখাউড়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার জন্য গাজীরবাজার সেতু অতিক্রম করা ছাড়া আর বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই।

আখাউড়ার ইউএনও মোহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই সেতু মেরামতের জন্য জেলা সওজ কর্তৃপক্ষের কাছে তিনবার চিঠি দিয়েছেন তিনি। সেতু নির্মাণে তাঁরা এখনো পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

সওজের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামীম আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, সেতুর মধ্যের পিলারটি থেকে কাঠ ও অন্যান্য অংশ সরে পড়েছে এবং গাড়ি উঠলেই সেতুটি কাঁপে। বিষয়টি আমার চোখেও পড়েছে। মধ্যের অস্থায়ী পিলারটির সঙ্গে আরও কিছু সংযুক্ত করার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, এই সেতুর ওপর দিয়ে ১০-১২ টন ওজনের যান চলাচল করতে পারবে। আপাতত অস্থায়ীভাবে মেরামত করে সেতুটি সচল রাখার চেষ্টা চলবে। তবে একসঙ্গে একাধিক ট্রাক চলাচল করতে পারবে না।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বেইলি সেতুর পাশে আরেকটি নতুন সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হবে। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটির পাশে সতর্কতামূলক কোনো সাইনবোর্ড না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।