দীর্ঘদিনের দলীয় কোন্দলের অবসান ঘটিয়ে জয়পুরহাটের দুটি সংসদীয় আসনেই বিজয়ী হতে চায় আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই পক্ষের নেতারাই ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন।
জেলা কমিটির সভা ডেকে নিজেদের অতীতের দ্বন্দ্ব–কলহ ভুলে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্যে একজোট হয়ে নির্বাচনী মাঠে নামার অঙ্গীকার করেছেন দুই সাংসদের বিভক্ত অনুসারীরা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জয়পুরহাট-১ (সদর ও পাঁচবিবি) আসনের বর্তমান সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামছুল আলমকে। জয়পুরহাট-২ (ক্ষেতলাল, কালাই ও আক্কেলপুর) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাংসদ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদকে।
১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুটি আসনেই বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। ২০১৪ সালের ‘একতরফা’ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের এই দুই সাংসদ নির্বাচিত হন। তবে এবার তাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার অপবাদ ঘোচাতে চান। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দুটি আসনেই ভোটের মাধ্যমে জয়ী হতে চায় আওয়ামী লীগ।
দুই সাংসদের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের কারণে জেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। তাঁরা দলীয় কর্মসূচি, জাতীয় দিবসের কর্মসূচিসহ পৃথকভাবে দলীয় সভা–সমাবেশ করতেন। এক অংশের নেতা-কর্মীরা অন্য অংশের ডাকা কর্মসূচি বা তাঁদের সভা–সমাবেশে অংশ নিতেন না। এক পক্ষের সভা থেকে অন্য পক্ষকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেওয়া ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। এ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত জেলা আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা।
গত বুধবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম সোলায়মান আলী জেলা কমিটি এবং সহযোগী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে নির্বাচনী সভা ডাকেন। শহরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে সকাল ১০টায় আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ সামছুল আলম।
দুই সাংসদের অনুসারী নেতারা এ সভায় অংশ নেন। দুই পক্ষের নেতারা সব ভেদাভেদ ভুলে নির্বাচনী প্রচারের মাঠে নামার বিকল্প নেই বলে মত দেন।
আবু সাঈদ আল মাহমুদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত জেলা কমিটির সহসভাপতি, মোমিন আহম্মেদ চৌধুরী, গোলাম হক্কানী, পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলামসহ জেলা যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।
সাংসদ সামছুল আলমের অনুসারী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম সোলায়মান আলী, সহসভাপতি রাজা চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আযম আলী, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, উভয় অংশের নেতারা কোন্দল ভুলে নির্বাচনে সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে জেলার দুটি আসনের বিজয় নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেন। উভয় অংশের নেতারা মনে করেন, কোন্দল নিরসন না হলে নিজেদের দলীয় প্রার্থী ও দলের ক্ষতি হবে। তাই দুটি আসনের দুই প্রার্থীর পক্ষে সবাই মিলে মাঠে নামবেন। তাঁদের আশা, বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের সুফল জনগণের কাছে তুলে ধরে ভোটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে পারবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম সোলায়মান আলী বলেন, দ্বন্দ্ব ছিল। তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে সবকিছু ভুলে এখন তাঁদের চূড়ান্ত লক্ষ্য একটাই। আর তা হলো দুটি আসনেই দলীয় প্রার্থীর বিজয়ী হওয়া। এ লক্ষ্যে জেলা কমিটি ও নির্বাচনী পরিচালনা কমিটি সব উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন কমিটিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তারা এককাট্টা হয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামবে। ইতিমধ্যে তারা কাজ শুরু করেছে।
সাংসদ আবু সাঈদ আল মাহমুদের অনুসারী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোমিন আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, রাজনীতি করলে নানা বিষয় নিয়ে মতবিরোধ থাকেই, কিন্তু এখন আর কোনো ভেদাভেদ নয়। এখন দলের স্বার্থ দেখতে হবে। সব বিভেদ ভুলে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে হবে।
সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বলেন, জেলা ও উপজেলার নেতারা বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এতে তাঁরা খুশি। তিনি আশাবাদী, সবাই মিলে মাঠে নামলে দুই প্রার্থীকে বিজয়ী করা সম্ভব। জয়পুরহাট-১ আসনে মোট নয়জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অন্যরা হলেন বিএনপির ফজলুর রহমান, ফয়সল আলীম ও মমতাজ উদ্দিন মণ্ডল, জাতীয় পার্টির তিতাস মোস্তফা, বাম গণতান্ত্রিক জোটের বাসদ নেতা ওয়াজেদ পারভেজ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জহুরুল ইসলাম এবং জেলা জামায়াতের আমির ফজলুর রহমান সাঈদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। স্বতন্ত্র নারী প্রার্থী হিসেবে আলেয়া বেগম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
জয়পুরহাট-২ আসনে বিএনপির গোলাম মোস্তফা ও আবু ইউসুফ মো. খলিলুর রহমান, জাতীয় পার্টির (এরশাদ) আবুল কাশেম, জাসদ (ইনু) আবুল খায়ের মো. সাখাওয়াত হোসেন, বাম গণতান্ত্রিক জোটের (বাসদ) শাহ জামাল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবদুল বাকি প্রমুখ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।