জোয়ার এলেই ডোবে বিদ্যালয়

শ্রেণিকক্ষে থই থই করছে পানি। তার মধ্যেই বেঞ্চে হাঁটু গেড়ে বসে আছে শিক্ষার্থীরা। কিছুক্ষণ আগেই তাদের ক্লাস শেষ হয়েছে। শ্রেণিকক্ষের বাইরেও একই অবস্থা। শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ নেমে পড়েছে বিদ্যালয়ের বারান্দার পানিনিষ্কাশনে। ডোবার মতো হয়ে আছে মাঠটা। ময়লা পানিতে ভাসছে পলিথিন আর বোতল। 

গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটার এই চিত্র চট্টগ্রাম নগরের সুলতান আল নাহিয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। তবে এই চিত্র শুধু একদিনের নয়। বছরের চার মাস দিনে দুবার জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বিদ্যালয়টি। 

পানি ওঠার কারণে বর্তমানে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার কমে গেছে। লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে প্রতিদিন। নোংরা ও ময়লা আবর্জনাযুক্ত পানিতে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কায় আছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে। শিক্ষার্থীরাই ব্যস্ত পানিনিষ্কাশনে। গতকাল বিকেল সাড়ে তিনটায় আগ্রাবাদের সুলতান আল নাহিয়ান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। জুয়েল শীল

১৯৮৭ সালে দক্ষিণ আগ্রাবাদের সিডিএ আবাসিক এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। এর দুই বছর পর ১৯৮৯ সালে এটি সরকারি হয়। প্রাক্‌–প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত—ছয় শ্রেণিতে শিক্ষার্থী আছে ৭৯৫ জন। একতলা ভবনের এই বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণটি সড়ক থেকে কিছুটা নিচু। ফলে কর্ণফুলী নদীতে জোয়ার এলে  পানি ঢুকে পড়ে বিদ্যালয়ে। ১০ কক্ষের এই ভবনের আটটি কক্ষই এখন পানিতে তলিয়ে যায়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আনোয়ার শাহাদাত প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর—এই চার মাস দিনে দুবার জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বিদ্যালয়টি। চারপাশের সড়কগুলো উঁচু করায় টানা বৃষ্টি হলে জলজটের সৃষ্টি হয়। ফলে পানি সরাতে অনেক দিন লেগে যায়। 

তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ৯০ শতাংশের ওপর শিক্ষার্থীর উপস্থিতি থাকে। শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাব নেই। তবুও বর্তমানে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ৮০ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। পাঁচ বছর ধরেই পানির সমস্যা লেগে আছে। অসংখ্যবার ওপরের মহলে যোগাযোগ করা হলেও সমাধান মেলেনি। 

উপস্থিতির হার কমে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শ্রেণিকক্ষে। এই শ্রেণিতে প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থী আছে। কিন্তু গতকাল সেখানে পাওয়া যায় ২০-২৫ জনকে। 

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায় সে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম।