ঢাকায় হাইকমিশনার পদে নিয়োগ নিয়ে নতুন করে বাংলাদেশের সঙ্গে তিক্ততায় জড়াচ্ছে পাকিস্তান। গত ফেব্রুয়ারিতে সাকলায়েন সাইয়েদাকে বাংলাদেশে পাকিস্তানের পরবর্তী হাইকমিশনার হিসেবে প্রস্তাব করেছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু ঢাকার কাছ থেকে এ নিয়ে কোনো জবাব পায়নি ইসলামাবাদ। এর পাল্টা হিসেবে ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক আহসানকে বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছিল দেশটি।
পাকিস্তানের পত্রিকা ডন-এর গতকাল মঙ্গলবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত সোমবার কূটনীতিক ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ ১৮ জনকে বিভিন্ন দেশে পাকিস্তানের হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ দিয়েছেন। ওই ১৮ জনের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য প্রস্তাবিত সাকলায়েন সাইয়েদাও রয়েছেন। তাঁকে কেনিয়ায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা ও ইসলামাবাদে কর্মরত বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, চার মাস ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেও সাড়া পাচ্ছেন না ইসলামাবাদে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস কাউন্সেলর মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। ফলে মে মাসের শেষ সপ্তাহে তাঁর নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশে আসা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। তথ্য ক্যাডারের ওই কর্মকর্তার জুনে অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে যাওয়ার কথা রয়েছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে ১৩ মে থেকে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ দূতাবাস কোনো ভিসা ইস্যু করেনি।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল দুপুরে ঢাকায় তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাকিস্তানিদের জন্য বাংলাদেশের ভিসা ইস্যু বন্ধ নেই বরং এ ইস্যুতে পাকিস্তান জোর করে বাংলাদেশের সঙ্গে ঝামেলা করতে চাইছে। বাংলাদেশ পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা ইস্যু বন্ধ রেখেছে বলে যে খবরটি বেরিয়েছে, সেটি নন-ইস্যু। আসলে জোর করে পাকিস্তান আমাদের ঝামেলায় ফেলতে চাইছে।’
>চার মাস ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেও সাড়া পাচ্ছেন না ইসলামাবাদে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস কাউন্সেলর।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আবদুল মোমেন বলেন, ‘পাকিস্তান আমাদের কিছু অফিসারকে ভিসা দিচ্ছে না। বিশেষ করে কনস্যুলার সেকশনের যে অফিসার, যিনি ভিসা ইস্যু করেন, তাঁর ভিসার মেয়াদ বাড়াচ্ছে না। কনস্যুলার সেকশনের অফিসার যদি না থাকেন, তাহলে পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা কে ইস্যু করবে? এ কারণে ভিসা ইস্যু করা যাচ্ছে না। কিন্তু ভিসা ইস্যু বন্ধ নেই। বাংলাদেশ পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা ইস্যু বন্ধ করেনি। তবে ব্যক্তিবিশেষ বাংলাদেশের ভিসা না-ও পেতে পারেন। সেটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।’
গত ৭ বা ১০ দিনে পাকিস্তানে বাংলাদেশ হাইকমিশন পাকিস্তানিদের কতটি ভিসা ইস্যু করেছে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে তিনি মন্ত্রী হওয়ার পর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে লোকজনের আসা-যাওয়া আছে। কিন্তু পাকিস্তানে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ভিসা শাখায় কর্মকর্তার ঘাটতির কারণে সেই সংখ্যাটি হয়তো কম।
গতকাল ইসলামাবাদের কূটনীতিক সূত্রে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ইসলামাবাদে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস কাউন্সেলর ইকবাল হোসেন ও তাঁর মেয়ের ভিসার মেয়াদ বাড়াতে গত ৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেন। এরপর অন্তত তিনবার বিষয়টি সুরাহার অনুরোধ জানিয়ে কূটনৈতিক পত্র পাঠানো হয়। এ নিয়ে কয়েক দফাও বৈঠক হয় ইসলামাবাদে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হয়নি।