দেশের মহানগর এবং এর বাইরের ক্লাবগুলোয় অর্থের বিনিময়ে হাউজি, কার্ডস ও নিপুণের মতো জুয়া খেলা প্রতিরোধে সরঞ্জাম জব্দে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিতের আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন।
হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে আপিল করার অনুমিত চেয়ে আবেদন করে ঢাকা ক্লাব ও উত্তরা ক্লাবসহ কয়েকটি ক্লাব। শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
ক্লাবগুলোর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আমীর উল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল ও মাসুদ রেজা সোবহান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রিটের পক্ষে ছিলেন রেদওয়ান আহমেদ।
অ্যাটর্নি জেনারেল জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, জুয়া খেলার সরঞ্জামাদি জব্দ এবং বাজেয়াপ্ত করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্লাবে গিয়ে জুয়া খেলার সরঞ্জামাদি জব্দ করতে পারবে না।
মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধান অনুযায়ী যৌন ব্যবসা ও জুয়া বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে রাষ্ট্র। কেউ এসে বলতে পারবেন না, তিনি জুয়া খেলা চালাবেন কিংবা যৌন ব্যবসা চালু রাখবেন। এটা সম্পূর্ণ নিষেধ।
দেশের পাঁচ জেলার ১৩টি ক্লাবে অর্থের বিনিময়ে হাউজি, ডায়েস ও কার্ডের মতো অভ্যন্তরীণ খেলার আয়োজন নিয়ে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে অর্থের বিনিময়ে, বাজি ধরে বা অন্য কোনোভাবে ভাগ্যের ওপর নির্ভর এসব খেলা আয়োজন বেআইনি ঘোষণা করা হয়। রায়ে ছয়টি নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। আপিল বিভাগ শুধুমাত্র তিন নম্বর নির্দেশনা স্থগিত করার আদেশ দিয়েছেন। ঢাকাসহ সব মহানগর এবং এর বাইরের ক্লাব ও জনসমাগমস্থলে এমন খেলার আয়োজন করা যাবে না বলে ঘোষিত রায়ে বলা হয়।
আইন অনুসরণ না করে ১৩টি ক্লাবে জুয়া, ডায়েস ও কার্ডের মতো অভ্যন্তরীণ খেলা আয়োজনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৬ সালে আইনজীবী মোহাম্মদ সামিউল হক ও রোকন উদ্দিন মো. ফারুক হাইকোর্টে ওই রিট করেন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন।
১৩টি ক্লাবে অর্থের বিনিময়ে হাউজি, ডায়েস ও কার্ডের মতো অভ্যন্তরীণ খেলার আয়োজনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ক্লাবগুলোকে এসব কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে স্বরাষ্ট্রসচিব; পুলিশের মহাপরিদর্শক; ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার; চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকসহ বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাকা ক্লাব আপিল বিভাগে আবেদন করে। এর শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ রুল নিষ্পত্তি করতে সময় বেঁধে দেন। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করা হয়।
হাইকোর্টের দেওয়া রুলে অর্থের বিনিময়ে ওই সব ক্লাবে কার্ড, ডায়েস ও হাউজি ইত্যাদির মতো অভ্যন্তরীণ খেলার নামে জুয়া আয়োজনকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ খেলার নামে যেকোনো ধরনের জুয়া কার্ডস, ডায়েস, হাউজি, নিপুণ খেলা ওই সব ক্লাবে ও অন্যত্র রোধে কেন বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়।
১৩ ক্লাব হচ্ছে ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, ধানমন্ডি ক্লাব, বনানী ক্লাব, অফিসার্স ক্লাব ঢাকা, ঢাকা লেডিস ক্লাব, ক্যাডেট কলেজ ক্লাব, চিটাগাং ক্লাব, চিটাগাং সিনিয়রস ক্লাব, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব, সিলেট ক্লাব ও খুলনা ক্লাব।