মে দিবস

জীবন ও জীবিকার সঙ্গে লড়াইয়ে শ্রমজীবী মানুষ

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে এবার মে দিবস পালিত হতে যাচ্ছে। প্রতিবছর মে দিবস এলেই শ্রমিকের দৃঢ়প্রত্যয়ী সুঠাম শরীরের দৃশ্যপটই ভেসে আসে। এবার তা বদলে গেছে। এবার শ্রমিকের মলিন মুখে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কাই বেশি। 

শ্রমজীবী মানুষেরা এখন স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে কাজে যেতে পারছেন না। সবকিছু বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে বসে আছেন দেশের লাখ লাখ দিন আনে দিন খান মানুষ। এসব মানুষ এখন বেঁচে থাকার যুদ্ধ করছেন প্রতিদিন। করোনার কারণে দেশের অনানুষ্ঠানিক খাতের সোয়া ৫ কোটি শ্রমজীবী মানুষের জীবন-জীবিকা আজ হুমকির মুখে পড়েছে। 

এক মাসের বেশি সময় ধরে রিকশাচালক, গাড়িচালক, দিনমজুর, কৃষিশ্রমিক, দোকানদার, ফুটপাতের ছোট ব্যবসায়ী—এমন খেটে খাওয়া কর্মজীবীরা এখন ঘরবন্দী। সুদিন ফেরার আশায় দিন গুনছেন তাঁরা। সীমিত পরিসরে পোশাক কারখানা খুললেও সেখানকার শ্রমিকেরাও আছেন স্বাস্থ্য ও চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে। 

 পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের এক হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্যসীমার ওপরে থাকা কমবেশি অর্ধকোটি লোক আবার গরিব হয়ে যেতে পারে। 

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে বিপুলসংখ্যক শ্রমজীবী মানুষ বেকার হয়ে বসে আছেন। কাজ না থাকায় তাঁদের আয়ের উৎসও বন্ধ হয়ে গেছে। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ (২০১৭) অনুযায়ী, দেশের ৮৫ শতাংশ কর্মজীবী লোক অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। তাঁরাই দিন আনে দিন খায় মানুষ। দেশের মোট ৬ কোটি ৮ লাখ লোক মজুরির বিনিময়ে কোনো না কোনো কাজে আছেন। এর মধ্যে ৫ কোটির বেশি অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। যেখানে কাজের কোনো নিশ্চয়তা নেই। অনেকটা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন তাঁরা। অন্যরা আনুষ্ঠানিক খাতের। করোনায় তাঁদের জীবিকাও হুমকিতে আছে।

 দেশের অনানুষ্ঠানিক খাতে শ্রমজীবী লোকের মধ্যে কৃষি খাতে আছেন ২ কোটি ৩০ লাখ ৪৮ হাজার নারী-পুরুষ। শিল্প খাতে ১ কোটি ১১ লাখ ৬৮ হাজার মানুষ কাজ করেন। আর সেবা খাতে আছেন প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ।

এই করোনাকালে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন খাত, যা অর্থনীতিতে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করছে। লাখ লাখ কারখানাশ্রমিক বেকার বসে আছেন। বিবিএসের উৎপাদন শিল্প জরিপ ২০১৯-এর প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, দেশে ছোট, বড়, মাঝারি ও অতি ক্ষুদ্র মিলিয়ে ৪৬ হাজার ২৯১টি কারখানা আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছোট কারখানার সংখ্যা ২৩ হাজার ৫৫৭। দেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট এসব কারখানায় কাজ করেন ১১ লাখ ২৭ হাজার ৮৪১ জন শ্রমিক।

এবারের মে দিবস ও শ্রমিকের অবস্থা সম্পর্কে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার প্রথম আলোকে বলেন, সরকার ও শিল্পমালিকেরা মিলে শ্রমিকের নিরাপত্তা ও শতভাগ বেতন নিশ্চিত করবেন—এটাই মে দিবসের চাওয়া।

ভিন্নরূপে এল এবার মহান মে দিবস 

ফাইল ছবি

আজ ১ মে, মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন। কিন্তু এবার এমন এক সময়ে দিবসটি এল যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বজুড়ে দরিদ্র ও শ্রমজীবা মানুষেরা সবচেয়ে কষ্টের মধ্যে পড়েছেন। অনেকে শ্রমিক ইতিমধ্যে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সামনে অনেকের চাকরি হারানোর শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। 

এমন পরিপ্রেক্ষিতে ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, সোনার বাংলা গড়ে তুলি’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে দেশে আজ পালিত হবে মহান মে দিবস। দিনটি শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণার উৎস। মেহনতি মানুষের চরম আত্মত্যাগে ন্যায্য অধিকার আদায়ের এক অবিস্মরণীয় দিন। 

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

মহান মে দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়াল থাবা আঘাত এনেছে। গভীর সংকটে পড়েছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ। এ পরিস্থিতিতে সরকার জনগণের পাশে থেকে ত্রাণকাজ পরিচালনাসহ সর্বাত্মক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, বর্তমান সরকার দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন ও কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রতিঘাত মোকাবিলায় দেশের রপ্তানি খাতের শ্রমিকদের বেতন দিতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে।