বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বৈধ বলে দেওয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে নিপুণ আক্তারের করা শুনানি নিয়ে আজ রোববার চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে আবেদনটি চার এপ্রিল আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়েছে।
চিত্রনায়ক জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে নিপুণ আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জয়ী ঘোষণা করে আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে ২ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট। ফলে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বৈধতা পায়। হাইকোর্টের এ আদেশের স্থগিতাদেশ চেয়ে পরদিন ৩ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল করেন নিপুণ আক্তার, যা আজ চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।
নিপুণের পক্ষে আজ শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান।
জায়েদ খানের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী নাহিদ সুলতানা ও মুজিবুল হক ভুইয়া।
আইনজীবী আহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। ৪ এপ্রিল আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আসবে।
পাশাপাশি সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। যেহেতু জায়েদ খান দায়িত্ব পালন করে আসছেন বা আসছিলেন, সেহেতু তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে পারবেন।
গত ২৮ জানুয়ারি শিল্পী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন প্রাথমিক ফলাফলে জায়েদ খানকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জয়ী ঘোষণা করা হয়। পরে নির্বাচনী আপিল বোর্ডের কাছে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন নিপুণ। আপিল বোর্ড সমাজসেবা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২ ফেব্রুয়ারি সমাজসেবা অধিদপ্তর এক চিঠিতে জানায়, আপিল বোর্ড এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বোর্ড জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে।
এ অবস্থায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের ২ ফেব্রুয়ারির চিঠি ও আপিল বোর্ডের ৫ ফেব্রুয়ারির সিদ্ধান্ত নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন জায়েদ খান। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।
রুলে ২ ফেব্রুয়ারির চিঠি ও ৫ ফেব্রুয়ারির আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এই রুল যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে রায় দেন আদালত। আজ যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেওয়া হলো।
এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারিতে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশে ২ ফেব্রুয়ারির চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি ২ ও ৫ ফেব্রুয়ারির চিঠি ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে জায়েদ খানের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। রুল শুনানির জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি দিন রাখেন হাইকোর্ট। এর ধাবাহিকতায় ২৩ ফেব্রুয়ারি রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়। তৃতীয় দিনের রুল শুনানি শেষে আদালত রায় ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে নিপুণ আপিল করেন। চেম্বার আদালতে শুনানি হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত আদেশ দেন। চেম্বার বিচারপতির হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে নিপুণের আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। একই সঙ্গে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনে ওই সময়ে দুই পক্ষকে (নিপুণ ও জায়েদ) স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। চেম্বার বিচারপতির এ আদেশ চলমান থাকবে উল্লেখ করে ১৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ নিপুণের আবেদন নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন। এরপর হাইকোর্টে রুল শুনানি হয়। এরপর জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে নিপুণ আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জয়ী ঘোষণা করে আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এ আদেশের স্থগিতাদেশ চেয়ে পরদিন আপিল করেন নিপুণ আক্তার। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানি শেষে আজ জায়েদ খানের প্রার্থিতা বৈধ বলে দেওয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন।