জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে পর্যবেক্ষণসহ এই আদেশ দেন।
পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেছেন, যদি আবেদনকারী (খালেদা জিয়া) প্রয়োজনীয় সম্মতি দেন, তাহলে মেডিকেল বোর্ড দ্রুত তাঁর অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের (বায়োলজিক এজেন্ট) জন্য পদক্ষেপ নেবে, যা বোর্ড সুপারিশ করেছে।
রায়ের পরে বিএনপির নেতা–কর্মীরা কার্জন হলের ফুটপাতে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) সেখান থেকে দুইজনকে আটক করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
আজ শুনানি শুরু হওয়ার আগে সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে আদালতের কাছে খালেদা জিয়ার সবশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কিত মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন জমা দেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আলী আকবর। এরপর শুনানি শুরু হয়।
প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন নিয়ে কথা বলেন। পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বক্তব্য দেন।
শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এই আদালতের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা মানবিক কারণে খালেদা জিয়ার জামিন চাইছি। খালেদা জিয়া সুস্থ মানুষ ছিলেন। কিন্তু আমরা দেখলাম, তাঁর অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।’
আদালতকে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘খালেদা জিয়ার অবস্থা এমন যে, তিনি পঙ্গু অবস্থায় চলে গেছেন। হয়তো ছয় মাস পর তাঁর অবস্থা আরও খারাপ হবে। এ জন্য মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হোক।’
বেলা ১১টার পর আদালত বিরতিতে যান। বিরতির পর আবার শুনানি গ্রহণ করেন।
জয়নুল আবেদীনের পর খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানিতে অংশ নেন।
পরে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানি করেন।
বেলা একটার দিকে শুনানি শেষ হয়। বেলা সোয়া একটার দিকে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আজ সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। এই সাজা বাতিল চেয়ে গত বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। শুনানি নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট ওই আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে বিচারিক আদালতের দেওয়া জরিমানার আদেশ স্থগিত করেন। এ ছাড়া বিচারিক আদালতে থাকা মামলার নথি তলব করেন হাইকোর্ট। গত ২০ জুন মামলার নথি হাইকোর্টে আসার পর খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন আদালতে তুলে ধরেন তাঁর আইনজীবীরা। গত ৩১ জুলাই জামিন আবেদন খারিজ করেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টে জামিন চেয়ে বিফল হয়ে গত ১৪ নভেম্বর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন খালেদা জিয়া। এই জামিন আবেদনের শুনানিতে গত ২৮ নভেম্বর আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার সবশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কে জানাতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে বোর্ডের মেডিকেল রিপোর্ট ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। সেদিন (৫ ডিসেম্বর) মেডিকেল প্রতিবেদন জমা না পড়ায় শুনানি পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর (আজ) তারিখ ধার্য করেন আদালত।
আরও পড়ুন:
খালেদা জিয়ার জামিন মেলেনি আপিল বিভাগেও
আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি শুরু
খালেদাকে মানবিক কারণে জামিন দিন, আদালতে জয়নুল
খালেদার জামিন শুনানি ঘিরে সুপ্রিম কোর্টে বাড়তি নিরাপত্তা