জামিনের পর যা বললেন রোজিনার আইনজীবী

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন রোজিনা ইসলামের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী
ছবি: দিপু মালাকার

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের জামিনের আবেদনের শুনানিতে তাঁর আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী আদালতকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা একে ওপরের পরিপূরক।’

আজ রোববার রোজিনা ইসলামের জামিনের আদেশের পর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন এহসানুল হক।
রোজিনা ইসলামের মামলায় জামিন আবেদনের শুনানিতে আদালতের মন্তব্য সম্পর্কে এহসানুল হক বলেন, আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে পাঁচ হাজার টাকার মুচলেকায় রোজিনা ইসলামের জামিন মঞ্জুর করেছেন। আদালতের মন্তব্যের সারমর্ম হচ্ছে, ‘আমরা প্রত্যেকে একে ওপরের পরিপূরক। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ভুল–বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে হবে। আইন ও আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না করে সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করবেন।’

আইনজীবী এহসানুল হক বলেন, ‘এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেই প্রস্তাবের ক্ষেত্রে আমরা কোনো দ্বিমত পোষণ করি না। যদিও আইনের চোখে শর্তযুক্ত জামিন কোনো জামিন নয়। তবুও আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আজকের ভূমিকাকে স্বাগত জানাই।’

জামিন পাওয়ার পর আজই রোজিনা ইসলাম মুক্ত হবেন কি না, জানতে চাইলে সমাজী বলেন, যেহেতু এ আদেশ মৌখিক। তবে তিনি আশা করেন, গুরুত্ব অনুধাবন করে আদালত দ্রুতই লিখিত আদেশ দেবেন। লিখিত আদেশের পরই মুক্তির আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। অন্য কোনো আইনি বাধা না থাকলে আজই রোজিনা ইসলাম জামিনে মুক্ত হবেন বলে আশা করেন তিনি।

জামিনে মুক্ত হওয়ার পর রোজিনা ইসলাম তাঁর আইনজীবীদের যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, সেভাবে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বলেও জানান এহসানুল হক সমাজী। তিনি আরও বলেন, ‘আজকে রাষ্ট্রপক্ষ ডকুমেন্টস দিয়েছে। ডকুমেন্টসের নেচারটা কী, সেটা সম্পর্কে অবগত নই। তিনি জামিনে বেরিয়ে এলে এরপর ওই ডকুমেন্টস আইনিভাবে উত্তোলন করে ন্যায়বিচারের স্বার্থে যা করা দরকার, তা করব।’
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে ১৭ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা ও নির্যাতন করা হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁকে শাহবাগ থানা–পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে তাঁর বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় দণ্ডবিধি ও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হয়।

শুনানিতে রোজিনা ইসলামের আইনজীবীরা বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, সৃজিত ও উদ্দেশ্যমূলক। জামিন পাওয়ার অধিকার তিনি সংরক্ষণ করেন। এটা তাঁর প্রাপ্য। তবে মামলার ধারাগুলো জামিন-অযোগ্য বলে দাবি করে রাষ্ট্রপক্ষ।

শাহবাগ থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৮ মে রোজিনা ইসলামকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশ তাঁকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। শুনানি নিয়ে আদালত রিমান্ডের আবেদন নাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আর জামিন আবেদনের ওপর অধিকতর শুনানির জন্য গত বৃহস্পতিবার দিন রাখেন। এ আদেশের পর রোজিনা ইসলামকে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে পাঠানো হয়।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তি দাবিতে কয়েক দিন ধরেই প্রতিবাদ ও আন্দোলন চলেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও প্রতিবাদ হয়েছে।