বাগেরহাট-৩ আসন

জামায়াতের প্রার্থীই চূড়ান্ত, হতাশ বিএনপির কর্মীরা

>এবারের নির্বাচনে বিএনপির কর্মী–সমর্থকদের জোরালো দাবি ছিল আসনটি তাঁদের দলীয় প্রার্থীকে দেওয়ার।
আবদুল ওয়াদুদ
আবদুল ওয়াদুদ

বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের হতাশ করে শেষ পর্যন্ত বাগেরহাট-৩ সংসদীয় আসনে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পেয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা আবদুল ওয়াদুদ। এ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহসভাপতি শেখ ফরিদুল ইসলাম। তবে শনিবার রাতে জামায়াতের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে এ আসনটি ছেড়ে দেয় বিএনপি।

সর্বশেষ ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থী দিয়েছিল বিএনপি। এরপর থেকে মোংলা ও রামপাল উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে আর বিএনপি প্রার্থী দেয়নি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছিল জামায়াত। এবারের নির্বাচনে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের জোরালো দাবি ছিল, আসনটি তাঁদের দলীয় প্রার্থীকে দেওয়ার।

বিএনপির নেতা শেখ ফরিদুল ইসলাম মনোনয়ন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। যেহেতু বিএনপি জোটবদ্ধ নির্বাচন করছে, সে কারণে জোটের শরিকদের ছাড় দিতেই হবে। যেহেতু তিনি (ওয়াদুদ) ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন, সেহেতু আমি আমার দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের অনুরোধ করব তাঁর পক্ষে কাজ করার জন্য।’

১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চারটি সংসদ নির্বাচনেই মোংলা-রামপাল উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিপক্ষে প্রার্থী দেয় জামায়াত। সব কটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন জামায়াতের প্রার্থী। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি ও জামায়াত আলাদাভাবে নির্বাচন করেছিল। বিএনপির প্রার্থী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান পেয়েছিলেন ১৭ হাজার ৮১২ ভোট। জামায়াতের প্রার্থী গাজী আবু বকর সিদ্দিক পান ৩২ হাজার ২০৫ ভোট। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও বিএনপি ও জামায়াত আলাদা নির্বাচন করেছিল। জামায়াতের প্রার্থী গাজী আবু বকর সিদ্দিক পেয়েছিলেন ৩৪ হাজার ৩২১ ভোট। আর বিএনপির প্রার্থী এ ইউ আহমেদ পান ২১ হাজার ৫৫০ ভোট। ২০০১ সাল থেকে জোটবদ্ধ নির্বাচনে এ আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে দেয় বিএনপি। ২০০১ ও ২০০৮ সালের দুটি নির্বাচনেই জামায়াতের প্রার্থী পরাজিত হন।

২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুন নাহার প্রায় ৩১ হাজার ভোটের ব্যবধানে জামায়াতের প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন। এরপর থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দাবি তুলে আসছিলেন এ আসনে বিএনপিকে মনোনয়ন দেওয়ার। তাঁদের সেই আশা পূরণ করে বিএনপি গত ২৭ নভেম্বর এ আসন থেকে বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহসভাপতি রামপাল সদরের বাসিন্দা শেখ ফরিদুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়। একই সঙ্গে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে আবদুল ওয়াদুদকেও প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়। এ নিয়ে মোংলা-রামপালে দুই দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। আর দুই নেতাও দাবি করেন, তাঁদের যার যার মনোনয়ন চূড়ান্ত। তবে শনিবার রাতে জামায়াতের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে শেষ পর্যন্ত জামায়াতের প্রার্থীকেই আসনটি ছেড়ে দেয় বিএনপি। তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, ফরিদুল ইসলাম ২০০৮ সাল থেকে মোংলা-রামপালে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করছেন। এলাকায় চক্ষু ক্যাম্প, বয়স্কদের চিকিৎসাসেবা, শিক্ষাবৃত্তিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে তাঁর অবদান উল্লেখ করার মতো। দলের দুঃসময়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সব সময় তাঁকে পাশে পান। মোংলা-রামপালের রাজনীতিতে নিয়মিত সময় দেন তিনি। রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিরোধিতাসহ সুন্দরবন রক্ষায় সংগ্রাম করে যাচ্ছেন ফরিদুল ইসলাম। জামায়াতের প্রার্থীর চেয়ে এলাকার মানুষের কাছে তিনি বেশি জনপ্রিয়।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলেন, গত দুটি নির্বাচনেই এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। মোংলা-রামপালে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার হিন্দু-খ্রিষ্টানের ভোট রয়েছে। বিগত নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, জামায়াতের প্রার্থী এই ভোটব্যাংক থেকে কোনো ভোট পাননি। কেন্দ্রের এসব বিষয় বিবেচনা করা উচিত ছিল।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর বাগেরহাট জেলা নায়েবে আমির আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে আমার নামে ৩৫টি মামলা হয়েছে, বেশ কয়েকবার কারাবরণ করেছি। তারপরও নেতা-কর্মীদের পাশে সব সময় ছিলাম, থাকব। এসব বিষয় বিবেচনা করেই জোটগতভাবে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’