সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রকৃতিকন্যা জাফলং। সারা বছরই এই এলাকায় পর্যটকদের আনাগোনা থাকত চোখে পড়ার মতো। ঈদ মৌসুম থেকে শুরু করে বিশেষ কোনো দিনে এখানে হাজারো পর্যটকে মুখর থাকত। প্রকৃতির অকৃপণ রূপ–লাবণ্যে ঘেরা গোয়াইনঘাটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো। বর্ষায় আর বৃষ্টিতে পাহাড়-টিলা, নদী, চা-বাগানে সবুজের হাতছানি। নয়নাভিরাম এসব সৌন্দর্য দেখতে ঈদ–পরবর্তী সময়ে পর্যটকেরা ছুটে আসতেন প্রকৃতিকন্যা জাফলং, দেশের একমাত্র মিঠা পানির জলারবন সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল, প্রকৃতির অপ্সরাখ্যাত বিছনাকান্দি, অপার সৌন্দর্যমণ্ডিত গ্রাম পান্তুমাই, জাফলংয়ের মায়াবী ঝরনাধারায়। যেখানে পর্যটকেরা মুগ্ধ হন, প্রেমে পড়েন শীতল প্রকৃতির এই লীলাভূমির।
এখানকার নৈসর্গিক প্রাকৃতিক শোভা অতি সহজে মুগ্ধ করে যে কাউকে। বিশেষ করে ঈদ–পরবর্তী সময়ে কয়েক লক্ষাধিক পর্যটকের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে এসব পর্যটনকেন্দ্র। গোয়াইনঘাটে চারটি পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটক ভিড় করতেন প্রকৃতিকন্যা জাফলং ও প্রকৃতির অপ্সরাখ্যাত বিছনাকান্দিতে। জাফলংয়ের মায়াবী ঝরনা, পিয়াইন নদের স্বচ্ছ জলের স্রোতোধারা, ওপারে নদীর ওপর ঝুলন্ত ব্রিজ, সমতল ভূমিতে জাফলং চা-বাগান, তামাবিল জিরো পয়েন্ট ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের খাসিয়াপল্লি—সবকিছুই খুব সহজেই আকৃষ্ট করে আগত পর্যটকদের।
বর্ষাকালে সব রূপ-যৌবন আর আভিজাত্য নিয়ে যেন হাজির হয়। ছোট-বড় নৌকা নিয়ে জাফলংয়ের জিরো পয়েন্ট, মায়াবী ঝরনা, চা-বাগানে পর্যটকেরা নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। আর জাফলংয়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের গাইড, চলার বাহন নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন কয়েক শ লোক। বর্ষা এলে পর্যটনকে ঘিরে জেগে উঠত জাফলংয়ের অর্থনীতি। তবে বর্তমানে করোনার এই সময়ে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে সুনসান নীরবতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এখানকার পর্যটন বন্ধ থাকায় পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন বিপাকে। আয়–রোজগার না থাকায় তাঁরা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
জাফলংয়ের বিভিন্ন বিপণিবিতান, ট্যুরিস্ট গাইড, খাবার হোটেল, আলোচিত্রীসহ কর্মসংস্থান হয় উপজেলার কয়েক হাজার মানুষের। তবে এবার করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছুই যেন থমকে গেছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে নৌকা তৈরি করলেও পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় গত ঈদ মৌসুমে পর্যটকশূন্য রয়েছিল প্রকৃতিকন্যা জাফলং। এবার পবিত্র ঈদুল আজহার ঈদেও একই পরিস্থিতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাস গত মার্চে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই অন্য পর্যটনকেন্দ্রের পাশাপাশি জাফলংয়েও পর্যটকদের আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। এর ফলে বর্ষা মৌসুমে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে।
নৌকামালিক মো. ফজলু রহমান বলেন, ‘অনেক টাকা খরচ করে পর্যটকদের জন্য ৪টি নৌকা তৈরি করেছিলাম। করোনা পরিস্থিতির কারণে পর্যটকদের আগমন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এখন নৌকা চলাচল বন্ধ রয়েছে। বর্ষায় মৌসুম আয়–রোজগারের একমাত্র উৎস এটি। কিন্তু পর্যটকের আগমন নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন বেকার হয়ে পড়েছি।’
এখানকার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসা বন্ধ।
জাফলং ট্যুরিস্ট গাইড ও পর্যটন নৌকার চালক যুব সংঘের সভাপতি বাছির মিয়া বলেন, বর্ষায় জাফলংয়ে পর্যটকদের আনাগোনাকে কেন্দ্র করে শতাধিক নৌকা রুজি–রোজগারের সন্ধানে বের হয়। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতিতে পর্যটকদের আনাগোনা নিষিদ্ধ হওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এসব নৌযান পেশায় যুক্ত লোকজন।