নতুন একটি জাহাজ নিতে জাপানে আসা ২০ জন বাংলাদেশি নাবিকের মধ্যে ৯ জনের দেহে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এই নাবিকদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষায় আরও তিনজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশি নাবিকেরা ২৩ জানুয়ারি নবনির্মিত একটি জাহাজ বুঝে নেওয়ার জন্য জাপানের শিকোকু দ্বীপের ইমাবারি শহরে আসেন। তখন নমুনা পরীক্ষায় সবারই করোনা নেগেটিভ আসে। নির্ধারিত কোয়ারেন্টিন শেষে তাঁরা ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন জাহাজ চালনা এবং জাহাজে সংযুক্ত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য ইমাবারি শিপ বিল্ডিং কোম্পানিতে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে জাহাজ নিয়ে তাঁদের চীনের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা ছিল।
তবে চীনে প্রবেশ করা যেকোনো জাহাজ কিংবা বিমানের যাত্রী এবং ক্রুদের জন্য যাত্রা শুরু করার ৭২ ঘণ্টা আগে করোনাভাইরাস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। তাই বাংলাদেশি নাবিকদের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে শুরুতে সাতজনের করোনা শনাক্ত হয়। ইমাবারির কর্তৃপক্ষ, বিশেষ কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থায় তাঁদের রাখে। তবে পজিটিভ শনাক্ত হলেও করোনার উপসর্গ তাঁদের মধ্যে এখনো দেখা যায়নি।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরে নেগেটিভ চিহ্নিত হওয়া ১৩ বাংলাদেশি নাবিকের আরেক দফা পরীক্ষা চালালে আরও দুজনের সংক্রমণ নিশ্চিত করে ইমাবারির স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষ পরে এঁদের সংস্পর্শে এসেছিলেন সন্দেহ হওয়া ইমাবারি শিপিং কোম্পানির কর্মচারী ও কোম্পানির বাণিজ্যিক অংশীদারসহ ৬০ জনের করোনা পরীক্ষা চালায়। তাঁদের মধ্যে দুজন জাপানি বাণিজ্যিক অংশীদারসহ তিনজনের করোনা শনাক্ত হয়। কোম্পানি এখন কর্মচারীদের বাড়িতে অবস্থান করে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশি নাবিকেরা সংক্রমণ নিয়ে জাপানে আসেননি, বরং জাপানে আসার পর এরা সংক্রমিত হয়েছেন। কেননা বাংলাদেশ থেকে যাত্রা শুরুর আগে এবং জাপানে পৌঁছানোর পর নেওয়া পরীক্ষায় তাঁরা সবাই নেগেটিভ প্রমাণিত হয়েছিলেন। ফলে কোথা থেকে এবং কীভাবে তাঁরা সংক্রমিত হলেন, জাপানের কর্তৃপক্ষ এখন তা বিস্তারিত খুঁজে দেখছে।
এদিকে বিশেষ ব্যবস্থাধীনে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে হওয়া বাংলাদেশি নাবিকেরা জাপানি খাবারে অভ্যস্ত না হওয়ায় যথেষ্ট অসুবিধায় তাঁদের পড়তে হচ্ছে। নাবিকদের সেই অসুবিধার খবর পেয়ে জাপানে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত নেতৃস্থানীয় জাপানিদের গড়ে তোলা সংগঠন জাপান-বাংলাদেশ সোসাইটি এঁদের জন্য তিন বেলা বাংলা খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। ইমাবারিতে অবস্থানরত সমিতির একজন সদস্য দূরত্ব বজায় রেখে দোভাষী হিসেবে কাজ করছেন।