জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্তিতে বৈশ্বিক সংস্থাটিকে ঢেলে সাজানোর সময় এসেছে। বিশেষ করে জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্র নয়, জনগণের কল্যাণে তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী জাতিসংঘের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ, জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে অনেকের হতাশা রয়েছে।
জাতিসংঘ বিষয়ে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের কর্ম অধিবেশনে বৃহস্পতিবার বক্তারা এই অভিমত দেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) ও জাতিসংঘ যৌথভাবে ‘জনগণের প্রয়োজনের সময়ে জাতিসংঘ: বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা নিয়ে পুনর্ভাবনা’ শীর্ষক দুই দিনের ওই ওয়েবিনারের আয়োজন করে। দুই দিনের ওয়েবিনারের দ্বিতীয় দিনে নাগরিক সমাজের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রথম কর্ম অধিবেশনে আলোচনা হয়।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘জাতিসংঘে একধরনের পরিবর্তনের সুর লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে সব দেশই একইভাবে এই পরিবর্তনে যুক্ত হচ্ছে না। অনেক দেশ দায়িত্বশীল হয়ে সহযোগী হয়ে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকছে। আবার কোনো কোনো দেশ বাধাও সৃষ্টি করছে। ফলে জাতিসংঘ এখনো অন্তর্বর্তীকালীন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে এসে ভাবার সময় এসেছে, কোথায় আমরা যেতে চাই।’
জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশের প্রত্যাশার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমরা আরও স্বচ্ছ ও দক্ষ জাতিসংঘ চাই। যেখানে জরুরি প্রয়োজনে জাতিসংঘ আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে। যাতে সদস্যদেশের প্রত্যাশা পূরণ হয়। তবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে জাতিসংঘের ভূমিকায় আমরা অত্যন্ত হতাশ। জাতিসংঘের বর্তমান কাঠামো যথেষ্ট কার্যকর নয়। সেটা নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাধিকার হোক, প্রবল শক্তিধর দেশগুলোর দ্বৈরথই হোক না কেন।’
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো বলেন, তরুণদের নেতৃত্বে নাগরিক সমাজের কর্মকাণ্ড বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ নানা ইস্যুতে তাদের ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাঁর মতে, নাগরিক সমাজের কাজের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। কারণ, তাঁরা কথা বলতে পারেন জাতিসংঘের মধ্যে। তবে সদস্যদেশে যদি নাগরিক সমাজের জন্য কাজের ক্ষেত্র না থাকে, তবে জাতিসংঘের করিডরে কীভাবে তারা সুযোগ পাবে।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, বড় তহবিল থাকার কারণে বড় এনজিওগুলো জাতিসংঘের কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারছে না। তহবিলের সংকট থাকায় ছোট এনজিওগুলোর এই সুযোগ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, জাতিসংঘের খোলনলচে পরিবর্তনের সময় এসেছে।
ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনসে টেরিঙ্ক বলেন, মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখার স্বার্থে জাতিসংঘকে কাঠামো নয়, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এই প্রেক্ষাপট থেকে ইইউ সেই শূন্যতা পূরণের জন্য কাজ করছে।
ভারতের অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) প্রেসিডেন্ট সমীর সরন বলেন, বর্তমান বিশ্ব হচ্ছে এশিয়ার, তাই জাতিসংঘে এশিয়ার যথাযথ প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে।
আলোচনায় সভাপতির বক্তৃতায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, জাতিসংঘের গণতন্ত্রায়ণ জরুরি হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘকে মানুষকেন্দ্রিক হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে।
আলোচনার সঞ্চালক ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (এসআইপিজি) জ্যেষ্ঠ ফেলো শহীদুল হক বলেন, শুধু দেশের জন্য কাজ না করে জনগণের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত জাতিসংঘের।
আলোচনায় আরও অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআইয়ের নীতিমালা পরামর্শক আনীর চৌধুরী, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ভূরাজনীতি ও আঞ্চলিক বিষয়ক এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় কেন্দ্রের প্রধান শেখ তানজীব ইসলাম, ইউনাইটেড অ্যাসোসিয়েশন ইয়ুথ অ্যান্ড স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট স্যামি ওয়াদুদ।