বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্মরত জাইকার ৪৮ জন স্বেচ্ছাসেবীকে চার সপ্তাহের ছুটিতে পাঠাচ্ছে জাপান। রংপুরে জাপানের নাগরিক কুনিও হোশি হত্যার পর বিপন্ন বোধ করায় তাদের সাময়িকভাবে দেশে ফেরত নেওয়া হচ্ছে। জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থায় (জাইকা) কর্মরত দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটলে নভেম্বরের শেষে জাইকার এসব স্বেচ্ছাসেবী ফিরে আসবেন।
জাইকার কর্মকর্তারা বলেন, জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশে কর্মরত ৬৮ জন স্বেচ্ছাসেবীর মধ্যে ৪৮ জনকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এঁদের মধ্যে ৩১ জনকে আজ মঙ্গলবার টোকিওতে পাঠানো হয়েছে। বাকি ১৭ জনকে কাল বুধবার নিজ দেশে পাঠানোর কথা রয়েছে। এসব স্বেচ্ছাসেবী রংপুর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, বরিশাল, যশোর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্মরত ছিলেন। যে ২০ জন স্বেচ্ছাসেবী বাংলাদেশে থাকবেন, তাঁদের সবাই কাজ করছেন শহর এলাকায়।
গত ৩ অক্টোবর রংপুরে কুনিও হোশিকে হত্যার পর থেকেই জাইকার স্বেচ্ছাসেবীদের চলাফেরার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে জাপান সরকার। কুনিও হত্যার পর যেসব স্বেচ্ছাসেবী বিপন্ন বোধ করছিলেন তাদের কাউকে কাউকে আগেই ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছিল। এ ছাড়া প্রত্যন্ত এলাকায় কর্মরতরা এত দিন নিজেদের আবাসস্থলে অনেকটা স্বেচ্ছাবন্দী হয়েছিলেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাইকার একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কুনিও হত্যার পর জাপানের সরকারি কর্মকর্তা ও নাগরিকদের পায়ে হেঁটে, রিকশায় ও খোলামেলা পরিবহনে চলাফেরার করতে নিষেধ করা হয়। গাড়ি ছাড়া চলাফেরা না করতে জাপানের নাগরিকদের সতর্ক করে দূতাবাস বার্তা দিয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্মরত জাইকার স্বেচ্ছাসেবীদের নিজেদের আবাসে বসে থাকা ছাড়া উপায় ছিল না। কারণ জাইকার বর্তমান কাঠামোতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্মরত তাঁদের সব স্বেচ্ছাসেবীকে গাড়ি দেওয়া সম্ভব নয়।
জাইকার অপর এক কর্মকর্তা বলেন, স্বেচ্ছাসেবীদের চার সপ্তাহের জন্য জাপানে ফেরত নেওয়া হচ্ছে। তবে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হলে তাঁদের আবার বাংলাদেশে আনা হবে।
অবশ্য এর আগে গত জানুয়ারিতে দেশে রাজনৈতিক সংঘাত শুরু হওয়ার পরপর জাইকার স্বেচ্ছাসেবীদের সাময়িকভাবে বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তাদের নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশে ১৯৭৩ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী পাঠিয়ে আসছে জাপান। এ পর্যন্ত এ দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবেশসহ বিভিন্ন খাতে কাজ করেছেন ১২ শরও বেশি জাপানি স্বেচ্ছাসেবী।