জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের অন্যতম শিকার বাংলাদেশ। তরুণেরাও এর বাইরে নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তাদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে কৃষি ও কর্মসংস্থান ব্যাহত হচ্ছে। কিন্তু এই তারুণ্যের শক্তিই পারে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থেকে দেশকে রক্ষা করতে। ঝুঁকি মোকাবিলায় তরুণদের সম্পৃক্ত করা গেলে এই কাজ আরও সহজ হবে। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
আজ শনিবার বিকেলে ‘বাংলাদেশে জলবায়ু কার্যক্রমে তারুণ্যের সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রথম আলো মিলনায়তনে ওই গোলটেবিল অনুষ্ঠিত হয়। এটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম। বৈঠকের আয়োজক লোকাল গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (লজিক) প্রকল্প। সহযোগী হিসেবে ছিল বাংলাদেশ সরকার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইডেন, ইউনাইটেড নেশনস ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইউএনসিডিএফ) ও ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি)। এ ছাড়া গোলটেবিল আয়োজনের সহযোগী ছিল প্রথম আলোর মাসিক ম্যাগাজিন চলতি ঘটনা।
বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব ও লোকাল গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (লজিক) প্রকল্পের পরিচালক সায়লা ফারজানা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অত্যন্ত ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত ৫০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তরুণদের সম্পৃক্ততা অনেক বড় একটি বিষয়। এটি যেন শুধু কথার মধ্যেই আটকে না থাকে, বাস্তবে এর প্রয়োগ দেখা যায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে এ জন্য এগিয়ে আসা দরকার।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই। এটা মোকাবিলা করেই বেঁচে থাকতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাগুলো আরও বড় জায়গায় তুলে ধরতে হবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেশের পাঁচ জেলা থেকে আগত ক্ষতিগ্রস্ত তরুণদের কষ্টের কথার সঙ্গে গ্রেটা থুনবার্গের কথার অনেক মিল রয়েছে বলে জানান তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমস্যার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন বরগুনার মো. রাব্বী, পটুয়াখালীর মোমো রাখাইন, কুড়িগ্রামের মো. সানোয়ার ও সুনামগঞ্জের জহুরা আক্তার।
ইউএনডিপির উপ–আবাসিক প্রতিনিধি ভ্যান নগুয়েন বলেন, কপ–২৬ সম্মেলনের আগে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এ ধরনের আলোচনার আয়োজন করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়ন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কতটুকু ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে, সে বিষয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। তাহলে সরকার সে অনুযায়ী ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করে সহায়তা করতে পারবে।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব ও লজিকের উপ-প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ শামসুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নানা উদ্ভাবনী প্রকল্প নিয়ে সরকার কাজ করছে। এসব কাজে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার তরুণদের আরও এগিয়ে আসা উচিত। তাঁরা এগিয়ে এলে ক্ষতি অনেকাংশে কমে যাবে। কারণ, জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলায় সরকার তরুণদের নানা ধারণা নিয়েও কাজ করছে।
ইউএনডিপির জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ার পরে সেগুলো মেরামতের জন্য তাঁরা যে পরিমাণ টাকা খরচ করেছেন, হিসাব করে দেখা গেছে, তার পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকা। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে যদি তাঁদের বাড়িঘর না ভাঙত, তাহলে তাঁদের এই টাকা বেঁচে থাকার জন্য ব্যয় করতে হতো না। এসব টাকা তাঁরা শিক্ষা, বস্ত্র ও চিকিৎসার জন্য ব্যয় করতে পারতেন। তাঁদের জীবনমান আরও উন্নত হতো।
ঢাকার সুইডেন দূতাবাসের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তরুণদের অংশগ্রহণ গত এক বছরে অনেকাংশে বাড়ানো গেছে বলে আজকের আলোচনা থেকে মনে হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পাশে সুইডেন সব সময় ছিল, ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের সঙ্গে থাকবে।
বিভিন্ন জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত তরুণদের নানা ঝুঁকি ও সমস্যার কথা তুলে ধরেন প্রথম আলোর প্রতিবেদক মোছাব্বের হোসেন।
অন্যদের মধ্যে জাতিসংঘ ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের কান্ট্রি ফোকাল পয়েন্ট জেসমুল হাসান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহনেওয়াজ খান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার তানজিনা দিলশাদ, ইউএনডিপির নলেজ ম্যানেজমেন্ট ও কমিউনিকেশন অফিসার আরিবা তাহরিম চৌধুরী, ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিবেদক নাজিফা ফরহাত বক্তব্য দেন।