জরাজীর্ণ ভবন, ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান

ছাদের পলেস্তারা খসে বেরিয়ে পড়েছে রড। নবীনগর উপজেলার ফতেহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছবি: প্রথম আলো
ছাদের পলেস্তারা খসে বেরিয়ে পড়েছে রড। নবীনগর উপজেলার ফতেহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।  ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ফতেহপুর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদ থেকে প্রায়ই খসে পড়ছে পলেস্তারা। বেরিয়ে পড়েছে রড। এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আহতও হচ্ছেন। এরপরও ঝুঁকি নিয়ে ভবনটিতে পাঠদান করা হচ্ছে।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সকালে পাঠদানের সময় ঝড় শুরু হলে ভবনটির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কক্ষের ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ে। এতে প্রথম শ্রেণির ইমন মিয়া এবং দ্বিতীয় শ্রেণির ফজলুল হক, মিতা আক্তার, মো. জাহিদুন আহত হয়। সহকারী শিক্ষক জেবুন্নেছা কবির ও দিলরুবা আক্তারের পিঠেও পলেস্তারার টুকরো পড়ে।

আহত শিক্ষার্থীরা বলে, ছাদ থেকে কংক্রিট পড়ায় ক্লাস করতে তাদের ভয় লাগে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়টির উত্তর পাশে পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট একটি পুরোনো ভবন রয়েছে। প্রায় চার বছর আগে উপজেলা প্রশাসন মৌখিকভাবে এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এ ছাড়া ১৯৯৫ সালে নির্মিত একটি ভবন ও ২০০৮ সালে নির্মাণ করা আরেকটি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯৫ সালে নির্মিত ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয়টিতে অফিস কক্ষ, শিশু শ্রেণি, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমসহ অন্তত ৯টি কক্ষ দরকার। সেখানে দুটি ভবনে রয়েছে ছয়টি কক্ষ।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, ১৯৯৫ সালে নির্মিত ভবনটির প্রতিটি কক্ষের ছাদ থেকে কংক্রিট ও পলেস্তারা খসে পড়ে রড বের হয়ে আছে। ২০০৮ সালে নির্মিত ভবনের দুটি কক্ষে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান চলছে। আর ১৯৯৫ সালের ভবনের দুটি কক্ষে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস হচ্ছে।

সহকারী শিক্ষক মনি রানী শীল বলেন, ‘আমি ১৫ বছর ধরে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি। এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ। এখন তো ঝড়ের দিন। একটু আকাশ খারাপ হলেই ভয়ে মনটা আঁতকে ওঠে। কখন যে পুরো ভবনটি ধসে পড়ে—এই ভয়ের মধ্যেই থাকতে হয়।’

বিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল রশিদা আক্তার প্রধান শিক্ষক হিসেবে এখানে যোগ দেন। প্রথম দিনই বিদ্যালয়ের পলেস্তারা খসে তাঁর মাথায় পড়ে। এতে আহত হন তিনি। আর ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল পরীক্ষা চলার সময় পলেস্তারা খসে সহকারী শিক্ষক মনি রানী শীল এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। সে সময় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে এসব বিষয় জানানো হয়। কিন্তু এসব ঘটনার এক বছর পার হলেও বিদ্যালয়ের ভবন মেরামতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

প্রধান শিক্ষক রাশিদা আক্তার বলেন, বৃষ্টি হলে বিদ্যালয়ের মাঠের চারপাশে থাকা গাছের ডাল ভেঙে বারান্দায় এসে পড়ে। তখন পাশের পরিত্যক্ত ভবনে পাঠদান চলে। দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া না হলেও যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরীফ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় শিশুদের নিরাপত্তায় দ্রুত কী করা যায়, সে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।