কাঠমিস্ত্রি আবুল কাশেম (৪৭)। আসবাবপত্র তৈরি ও কাঠ খোদাই করে নকশার জন্য সুনাম রয়েছে তাঁর। কিশোর বয়স থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত। আওয়ামী লীগের সমর্থক। একদিন মাথায় চাপল বঙ্গবন্ধু–কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের তৈরি কোনো একটি আসবাবপত্র উপহার দেওয়ার। শেষে তৈরি করলেন একটি খাট। কিন্তু দুই বছর ধরে এই খাটটি পাঠানোর চেষ্টা করেও পারছেন না।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার উত্তর হরিণা গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেমের আয় খুব বেশি নয়। কোনো রকমে চলে স্ত্রীসহ চারজনের সংসার। কিন্তু তিনি দমে যাননি। প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে নয় মাসের চেষ্টায় তৈরি করেন খাটটি। খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা।
গত বুধবার উত্তর হরিণা গ্রামের বাড়িতে কথা হয় কাশেমের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি খাট তৈরি শুরু করেন, শেষ হয় সেপ্টেম্বর মাসে। খাটে ব্যবহার করা হয়েছে সেগুন কাঠ। নিজের পরিশ্রম তো আছেই। টাকার সংস্থান করতে পৈতৃক জমি বিক্রি করেন দুই শতক ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে ঋণ নেন ২০ হাজার টাকা।
খাটটি এখন রাখা হয়েছে উপজেলা পরিষদসংলগ্ন ফয়েজ শফি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে। দেখা যায়, সাত ফুট দৈর্ঘ্য ও ছয় ফুট প্রস্থের খাটে নানা নকশায় করা হয়েছে। এতে রয়েছে জাতীয় পতাকা, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি, আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা, গোপালগঞ্জের সংসদীয় আসনের নম্বর এবং বঙ্গবন্ধুর নাম বাংলা ও আরবিতেও লেখা।
ফয়েজ শফি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেব প্রসাদ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন এ খাটটি তিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখেন।
আবুল কাশেম বলেন, তৈরির পর থেকে দুই বছর ধরে স্থানীয় সাংসদ, আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তিনি এ খাট প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাতে পারেননি। এ নিয়ে তিনি হতাশ।
এ ব্যাপারে লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরাও দলের নেতাদের এ ব্যাপারে অবহিত করেছি। তবে কোনো সাড়া পাইনি। আবুল কাশেম এ ব্যাপারে খুব চেষ্টা করছেন।’
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহাবুব আলমও এ ব্যাপারে অবগত আছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।