জন্মবিরতিকরণ বড়ি একটি অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ–পদ্ধতি। এটি সহজলভ্য এবং গ্রহণের পদ্ধতি অনেক সহজ হওয়া সত্ত্বেও নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিবেচনায় অনেকে এ পদ্ধতি গ্রহণ করতে গিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে থাকেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক এ পদ্ধতি গ্রহণের ক্ষেত্রে কারা উপযুক্ত এবং কাদের জন্য এটি ক্ষতিকর।
চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রজননক্ষম যেকোনো নারীই বড়ি খেতে পারবেন। এটি গ্রহণের কিছু সুবিধা রয়েছে—
প্রায় ৯১ শতাংশ কার্যকর ও নিরাপদ একটি পদ্ধতি।
সহজলভ্য এবং গ্রহণপদ্ধতিও সহজ।
যাঁদের অনিয়মিত ঋতুচক্র, তাঁদের ক্ষেত্রে মাসিক নিয়মিত করতে সাহায্য করে।
মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের পরিমাণ কমায়।
মাসিককালীন ব্যথা ও মাসিকের পূর্বলক্ষণগুলো কমিয়ে আনে।
ডিম্বাশয়ের টিউবার ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
জরায়ুর টিউমার, এন্ডোমেট্রিওসিস ও জরায়ুর মুখের ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
এটি একটি অস্থায়ী পদ্ধতি। তাই পিল বন্ধের তিন মাসের মধ্যেই সন্তানধারণের সক্ষমতা ফিরে আসে।
এটি নিয়মিত সেবন করতে হয়। তাই অনেক ক্ষেত্রে দুটির অধিক বড়ি খেতে ভুলে গেলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভসঞ্চার হতে পারে।
স্তন্যদানকারী মায়েরা খেলে বুকের দুধের পরিমাণ কমে যেতে পারে।
জন্মবিরতিকরণ বড়ির হরমোনের প্রভাবে অনেকে বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, বিষণ্নতা, খিটখিটে মেজাজ, স্তনে চাকা ইত্যাদি নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হন।
যৌনবাহিত রোগের সংক্রমণের ক্ষেত্রে এটি কনডমের মতো বাধা সৃষ্টি করতে পারে না।
আগের প্রচলিত বড়িগুলোতে হরমোনের পরিমাণ বেশি থাকার দরুন স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেত। কিন্তু বর্তমানে চতুর্থ প্রজন্মের অল্প মাত্রার জন্মবিরতিকরণ বড়িগুলো বরং স্থূলতা, রক্তচাপ ও রক্তের চর্বির মাত্রা হ্রাসে সাহায্য করে।
নারীর বয়স ৩৫ বছরের অধিক হলে।
স্তন্যদানকারী মা।
যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি।
যাঁদের ধমনি ও শিরায় রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা ও রোগ রয়েছে।
যাঁদের মস্তিষ্কে রক্তক্ষয়, স্ট্রোক ও হৃদ্রোগের ইতিহাস রয়েছে।
যাঁদের মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনের উপসর্গ রয়েছে।
যাঁরা স্তন ক্যানসার ও এস্ট্রোজেন হরমোনের ওপর নির্ভরশীল টিউমারের রোগী।
জন্ডিস ও যকৃতের টিউমারে আক্রান্ত রোগী।
যাঁরা অনিয়ন্ত্রিত বহুমূত্র রোগ এবং এ–সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছেন।
যাঁরা ধূমপান করেন।
সুতরাং চিকিৎসকদের নির্দেশনায় গ্রহণ করলে জন্মবিরতিকরণ বড়ি সবচেয়ে সহজ ও নির্ভরযোগ্য একটি পদ্ধতি।
ডা. ফারজানা শারমিন : সহকারী অধ্যাপক, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা