সাক্ষাৎকার

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার শতভাগে নিতে হবে

সর্বশেষ বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস) ২০১৭-১৮ অনুসারে, ৫২ শতাংশ নারী-পুরুষ আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। তবে অনিয়মিত ব্যবহারের হার বেড়ে ৩৭ শতাংশ হয়েছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের স্থবিরতার মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা এবং এর বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ–চিকিৎসকদের সংগঠন অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাজনীন আখতার।

অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম
ছবি : সংগৃহীত
প্রশ্ন

প্রথম আলো: বিডিএইচএসের তথ্য অনুসারে, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীদের মধ্যে খাওয়ার বড়ি ব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি, ২৫ শতাংশ। খাওয়ার বড়ি কি বেশি নিরাপদ?

ফেরদৌসী বেগম: জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলোর ক্ষেত্রে দম্পতিদের মধ্যে খাওয়ার বড়ি ও কনডমের ওপর নির্ভরশীলতা বেশি। দম্পতিরা অন্য পদ্ধতিতে যেতে ভয় পান। তবে নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে সব পদ্ধতিই নিরাপদ ও কার্যকর। প্রজনন প্রয়োজনীয়তা ও বয়স অনুপাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নির্ভর করে। তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব বেশি নেই।

প্রশ্ন

দাম্পত্য জীবনের শুরুতে কোন পদ্ধতি নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়?

ফেরদৌসী বেগম: বিয়ের পরপর খাওয়ার বড়ি ও কনডম ব্যবহারের পরামর্শ বেশি দেওয়া হয়। যদিও কনডম ব্যবহারে ব্যর্থতার হার বেশি। স্থায়ী পদ্ধতি ছাড়া যেকোনো পদ্ধতিই নিতে পারবেন নবদম্পতিরা। সাধারণত একটি সন্তান না হওয়া পর্যন্ত কপার টির মতো দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি নেওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়। দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতিগুলো ৩ মাস থেকে ১০ বছর মেয়াদের হয়ে থাকে। জন্মনিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতির বিষয়ে অনেক দম্পতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন, এসব দূর করতে হবে।

প্রশ্ন

বিয়ের পরপর খাওয়ার বড়ি সেবন শুরু করলে কি পরে গর্ভধারণে সমস্যা হয়?

ফেরদৌসী বেগম: খাওয়ার বড়িতে গর্ভধারণে কোনো সমস্যা হয় না। অন্য শারীরিক সমস্যার কারণে অনেক নারী গর্ভধারণ করতে পারেন না। তাঁদের অনেকে মনে করেন, বিয়ের পরপর খাওয়ার বড়ি সেবন করেছেন বলে মা হতে পারছেন না; যা একেবারেই ভুল ধারণা।

প্রশ্ন

চতুর্থ প্রজন্মের খাওয়ার বড়ি আসলে কী?

ফেরদৌসী বেগম: জন্মনিয়ন্ত্রণের খাওয়ার বড়িতে সাধারণত ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নামে দুটি হরমোন থাকে। এই হরমোনগুলো এমন মাত্রায় প্রয়োগ করা হয়, যাতে স্বাভাবিক ডিম্বস্ফুটন হয় না। এভাবেই জন্মনিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে। চতুর্থ প্রজন্মের খাওয়ার বড়িতে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কম, ২০–২৫ মাইক্রোগ্রামের মতো থাকে। এতে মাথা ঘোরা, বমি হওয়ার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হয়। চতুর্থ প্রজন্মের কিছু খাওয়ার বড়িতে ফলিক অ্যাসিড দেওয়া থাকে। বিবাহিত–অবিবাহিত মেয়েদের হরমোনজনিত অন্য অসুস্থতা অ্যান্ডোমেট্রিওসিস (জরায়ুর বাইরে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি), পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম (নারীদের মধ্যে পুরুষের হরমোন অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার উপসর্গ), ডিম্বাশয়ে সিস্ট এবং অনিয়মিত মাসিকের চিকিৎসাতেও চতুর্থ প্রজন্মের খাওয়ার বড়ি ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্ন

খাওয়ার বড়ি কাদের জন্য নিষেধ?

ফেরদৌসী বেগম: বেশির ভাগ নারী রজঃনিবৃত্তি পর্যন্ত খাওয়ার বড়ি খেতে পারেন। তবে ৪০ বছরের বেশি বয়সী যেসব নারীর উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের জন্য খাওয়ার বড়ি নিষেধ। যাঁদের রক্ত জমাট বাঁধাজনিত সমস্যা বা লিভারে কোলেস্টাসিস হওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তাঁদের জন্যও নিষেধ। তবে মনে রাখতে হবে, তাঁদের গর্ভনিরোধ পদ্ধতি নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা এসব সমস্যাসহ গর্ভধারণ করলে মারাত্মক সমস্যায় পড়বেন। হুট করে খাওয়ার বড়ি নিষেধ না করে তাঁদের জন্য যথাযথ পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করে খাওয়ার বড়ি বন্ধ করতে হবে।

প্রশ্ন

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির গুরুত্ব কতখানি?

ফেরদৌসী বেগম: প্রত্যেক বুদ্ধিমান ও সচেতন মানুষের উচিত স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে পরামর্শ করে উপযুক্ত পদ্ধতি বেছে নেওয়া এবং নিয়মিত ব্যবহার করা। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার শতভাগে নিতে হবে। যে দম্পতি যখন সন্তান চাইবে, তখন পদ্ধতি ছেড়ে দেবে। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে অংশগ্রহণ বাড়াতে সচেতনতা ও পদ্ধতি পেতে প্রবেশগম্যতা বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।