দেশে জঙ্গিবাদ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও জঙ্গিবাদ নিয়ে এখনো কমবেশি উদ্বেগ আছে বেশির ভাগ তরুণের। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর ভূমিকা এবং সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তাঁরা।
অবশ্য ২০১৭ ও ২০১৯ সালের প্রথম আলো তারুণ্য জরিপ পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, এ উদ্বেগ দুই বছর আগের চেয়ে কমেছে। জঙ্গিবাদ নিয়ে একেবারেই উদ্বিগ্ন নন, এমন তরুণের সংখ্যাও দুই বছরে বেড়েছে।
অবশ্য ২০১৭ সালের জরিপের আগের বছর ঢাকার হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যাপক অভিযানে অনেক জঙ্গি গ্রেপ্তার ও অনেকে নিহত হয়েছে। পাশাপাশি নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চালানো হয়েছে। এরপর গত দুই বছরে তেমন কোনো জঙ্গি হামলা হয়নি। এসব পদক্ষেপের ফলে জঙ্গিবাদ নিয়ে উদ্বেগ ও আলোচনা কমে এসেছে।
হোলি আর্টিজানে হামলার পরের বছর ২০১৭ সালে করা জরিপে দেখা গিয়েছিল, ৭২ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ জঙ্গিবাদ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। এবার সেটি কমে হয়েছে ৬৭ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা জঙ্গিবাদ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। আর ৪১ দশমিক ২ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা কিছুটা উদ্বিগ্ন।
এবারের জরিপে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ বলেছেন, তাঁরা জঙ্গিবাদ নিয়ে মোটেই উদ্বিগ্ন নন। ২০১৭ সালে এমন মনোভাবাপন্ন তরুণ ছিলেন ৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
মানুষ কেন জঙ্গিবাদে জড়ায়—এ প্রশ্নে তরুণদের মধ্যে চিন্তাভাবনার পরিবর্তন দেখা গেছে। জঙ্গিবাদে জড়ানোর কারণ কী বলে মনে করেন? এ প্রশ্ন তরুণদের কাছে রাখা হয়েছিল। জবাবে অর্ধেকের বেশি—৫৮ দশমিক ৯ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা জানেন না বা বলতে পারছেন না। ২০১৭ সালের জরিপেও একই প্রশ্ন ছিল। সেবার জানেন না বা বলতে পারছেন না—এই জবাব দিয়েছিলেন ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
২০১৭ সালে দেখা গিয়েছিল, বেশির ভাগ (৬৩ দশমিক ৮ শতাংশ) তরুণ মনে করতেন, ধর্মের অপব্যবহার ও অপব্যাখ্যায় জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেয়। এবার এমন জবাব দিয়েছেন ১৩ দশমিক ১ শতাংশ।
২০১৯ সালের জরিপে এসে তরুণেরা মোটা দাগে জঙ্গিবাদে জড়ানোর সম্ভাব্য যেসব কারণের কথা বলেছেন, তা হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক ন্যায়বিচারের অভাব, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, দারিদ্র্য ও ধর্মের অপব্যবহার। এর বাইরে শিক্ষার অভাব, ধর্মের অপব্যাখ্যা, বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রভাব, বেকারত্বকেও কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকে।
৯ দশমিক ৬ শতাংশ তরুণ মনে করেন, জঙ্গিবাদের উত্থান বা জড়ানোর কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা। ৬ দশমিক ৮ শতাংশ সামাজিক ন্যায়বিচারের অভাব এবং ৬ দশমিক ৩ শতাংশ সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়কে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।