কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠেই হামলার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিল সন্দেহভাজন জঙ্গিরা। হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সন্দেহভাজন জঙ্গি শফিউল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এ কথা বলছে র্যাব।
এদিকে শোলাকিয়ার হামলায় গ্রেপ্তার জাহিদুল হক আদৌ এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন কি না, তা নিয়ে পুলিশ এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে। জাহিদুলের পরিবার তাঁকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি করেছে।
ঈদের দিন (গত বৃহস্পতিবার) দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের স্থান শোলাকিয়ায় ঈদগাহের কাছে টহলরত পুলিশের ওপর বোমা, গুলি ও চাপাতি নিয়ে জঙ্গি হামলা হয়। এতে দুই পুলিশ, এক সন্দেহভাজন জঙ্গি ও এক গৃহবধূ নিহত হন। পুলিশ শফিউল ইসলাম ও জাহিদুল হককে ওই দিনই গ্রেপ্তার করে।
কিশোরগঞ্জ র্যাব-১৪-এর অধিনায়ক রাজীব কুমার দেব গতকাল সোমবার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হামলার মামলায় প্রধান আসামি শফিউল জানিয়েছেন, তাঁরা মূলত শোলাকিয়া মাঠেই হামলার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। কিন্তু আজিমউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের কাছে পুলিশের চ্যালেঞ্জের মুখে সেখানেই তাঁরা বিস্ফোরণ ও হামলার ঘটনা ঘটান।
পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে র্যাবের হেফাজতে চিকিৎসাধীন শফিউল ঠিক কোন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তা-ও র্যাবের কাছে স্পষ্ট নয়। এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রাজীব কুমার বলেন, ‘সে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।’ তবে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হকের দাবি, হামলাকারীরা নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীনের (জেএমবি) সদস্য।
এদিকে গত রোববার রাতে সন্দেহভাজন জাহিদুল হককে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। আসামি শফিউল ইসলামকে সুস্থ হওয়া সাপেক্ষে দ্রুত হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। কিশোরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুর্শেদ জামান প্রথম আলোকে বলেন, জাহিদুলের ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. আবদুস সালাম খান তা মঞ্জুর করেন।
তদন্তের সঙ্গে যুক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গত প্রায় চার দিন জাহিদুল পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। এই কদিনেও পুলিশ তাঁর কাছ থেকে কিছু পায়নি। তাই রিমান্ডেও কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
জাহিদুলকে আজিমউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের কাছের এক বাসা থেকে হামলার দিন দুপুরে আটক করেছিল পুলিশ। জাহিদুলের পরিবার তাঁকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি করেছে। পরিবারের ভাষ্য, প্রায় দুই বছর আগে মা মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি অসুস্থ। এক বছর আগে হঠাৎ পড়াশোনা ছেড়ে দেন। এরপর থেকে তিনি বাসাতেই থাকতেন। প্রায়ই বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে দু-এক দিনের জন্য বের হয়ে যেতেন। তিনি কিশোরগঞ্জের ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকায় তিতুমীর কলেজে ইংরেজিতে স্নাতক (সম্মান) পড়ছিলেন। অসুস্থতার কারণে তিনি পড়াশোনায় নিয়মিত নন।
ঝর্ণা রানী ভৌমিক সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত?: পুলিশের সঙ্গে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের গোলাগুলির সময় স্থানীয় বাসিন্দা ঝর্ণা রানী ভৌমিক নিহত হন। পুলিশের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ঝর্ণা রানী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ঝর্ণা ভৌমিকের বাড়ি পুলিশের সেদিনের অবস্থানের বিপরীতে। পুলিশের গুলিতে তাঁর মারা যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। জানতে চাইলে মামলার বাদী পাকুন্দিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সামসুদ্দীন বলেন, ‘এটি আমাদের মন্তব্য। পুলিশ তো একা গুলি ছোড়েনি, সন্ত্রাসীরাও ছুড়েছে।’
দিনাজপুর অফিস জানায়, গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন জঙ্গি শফিউল ইসলামের বাবা মো. আবদুল হাই প্রধানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া আবদুল হাই প্রধান দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় শাখার কর্মী বলে দাবি করেছে পুলিশ।
দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মো. রুহুল আমিন গতকাল বলেন, জেলা পুলিশের বিশেষ দল সাভার থানার পুলিশের সহযোগিতায় গত রোববার সাভার এলাকা থেকে আবদুল হাইকে গ্রেপ্তার করে। সন্ধ্যায় তাঁকে দিনাজপুরে আনা হয়। এরপর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাঁকে জেলহাজতে পাঠান।
আবদুল হাই প্রধানের বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার রানীগঞ্জ বাজারের কাছের দক্ষিণ দেবীপুর গ্রামে বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ বলেছে, আবদুল হাই ওই এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর একজন সক্রিয় কর্মী। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। মামলা দায়েরের পর থেকেই গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি পলাতক ছিলেন।
কিশোরগঞ্জ সদর থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন গতকাল জানান, শোলাকিয়ায় হামলায় পুলিশের গুলিতে নিহত সন্দেহভাজন জঙ্গি আবির রহমানের লাশ তাঁর পরিবার গ্রহণ না করায় শহরের পৌর কবরস্থানে পুলিশ হেফাজতে দাফন করা হয়।