ছয় নদীতে যোগ হচ্ছে দূষণের নতুন উপাদান

ঢাকার আশপাশে ছয় নদ-নদী ক্রমবর্ধমান হারে দূষিত হচ্ছে। প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন নতুন দূষণকারী উপাদান। পানির সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় পানির টেকসই ব্যবস্থাপনা করতে হবে। এখনই দূষণ রোধ করার পাশাপাশি পানি পরিশোধনের উন্নততর প্রযুক্তি ও পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
গতকাল রোববার সকালে সিরডাপ মিলনায়তনে প্লাজমা প্লাস অ্যাপ্লিকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও ব্রতী আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা উঠে আসে।
সেমিনারে ঢাকার আশপাশের ছয় নদনদী নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্লাজমা প্লাসের প্রধান বিজ্ঞানী আমির এইচ খান। তিনি ঢাকার চারপাশে প্রবাহিত বংশী, তুরাগ, বালু, ধলেশ্বরী, বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নিয়ে গবেষণা করেন। ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নয় মাস ধরে পানির নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করে এই গবেষণা চালানো হয়। প্রতিটি নদ-নদীর গড়ে ১০টি এলাকা থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
আমির এইচ খান বলেন, বর্তমানে ঢাকায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি লিটার পানি ব্যবহার করে। এর ৭৮ শতাংশই ভূগর্ভ থেকে ওয়াসার ৭৩০টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে তোলা হয়। বাকি ২২ শতাংশ আসে নদ-নদীর পানি পরিশোধনের মাধ্যমে। কিন্তু এসব নদীর পানিতে ক্রমবর্ধমান হারে দূষণ ঘটেই চলছে। এ ছাড়া প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন নতুন দূষণকারী উপাদান।
মাত্রাতিরিক্ত অ্যামোনিয়ার কারণে সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি শোধন ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। সংগৃহীত নমুনা পানির মানসংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এটা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে যে ঢাকার চারপাশের ছয় নদ-নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা গ্রহণযোগ্য সীমার অনেক ওপরে।
গবেষণায় বলা হয়, ২০৫০ সাল নাগাদ ঢাকা নগরীর জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখে পৌঁছাবে—এমন ধারণা করা হচ্ছে। মাথাপিছু সুপেয় পানির হার আরও কমে আসবে। পানি সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় পানির টেকসই ব্যবস্থাপনা করতে হবে। এখনই দূষণ রোধ করার পাশাপাশি পানি পরিশোধনের উন্নততর প্রযুক্তি ও পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
পানির সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার চালু করতে হবে। শিল্পদূষণ রোধে নজরদারির পাশাপাশি কৃষিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান মাটি ও পানির কী ক্ষতি করছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, নদী না থাকলে বাংলাদেশ থাকবে না। এখনই পানির বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আলোচক হিসেবে অংশ নেন ওয়াসা সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরির প্রধান আলমগীর হোসেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক তানভীর আহমেদ, বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সের ফেলো জহুরুল করিম, বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাপার সাধারণ সম্পাদক এম এ মতিন, নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান আতহারুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ।