মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে ঈদযাত্রায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে। ঘাটে যাত্রীবাহী বাসের চাপ খুব একটা নেই। তবে প্রাইভেট কারসহ ছোট যানবাহনের চাপ অনেক বেড়ে গেছে। এতে ঘরমুখী মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এদিকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে গতকাল শুক্রবার ভোরে যানবাহনের চাপ কিছুটা বাড়লেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কমে যায়।
গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে পাটুরিয়া ৫ নম্বর ঘাটের অদূরে টেপড়া-নালী সড়কের নালী এলাকায় মোস্তাফিজুর রহমান নামে প্রাইভেট কারের এক আরোহীকে ভ্যাপসা গরমের মধ্যে শিশুসন্তানকে কাঁধে নিয়ে পায়চারি করতে দেখা যায়। এ সময় কথা হলে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ তিন ঘণ্টা ধরে আটকে আছি। গাড়ির ভেতরে বসে থাকতে চায় না, কান্না করে। তাই ওকে (শিশু) শান্ত করার চেষ্টা করছি।’ গতকাল ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে আসা মোস্তাফিজুরের মতো আরও অনেক পরিবারকে ঘাট এলাকার আশপাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
ঘাটে ব্যক্তিগত বিভিন্ন গাড়ির চাপ ছিল অনেক বেশি। এসব গাড়ি টেপড়া-নালী সড়কে দীর্ঘ সারিতে আটকা পড়ে। এসব গাড়িকে ফেরিতে উঠতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়। তবে যাত্রীবাহী বাসের চাপ ছিল কিছুটা কম। ঈদের আগে এসব যানবাহনের যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হয়। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘাট এলাকা ও এর আশপাশে এই চিত্র দেখা যায়।
ভুক্তভোগী একাধিক যাত্রী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টেপড়া-নালী সড়কের দৈর্ঘ্য মাত্র ছয় কিলোমিটার। সড়কটি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের শিবালয়ের টেপড়া থেকে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটে গিয়ে মিশেছে। গতকাল ভোর চারটার পর থেকে এই সড়কে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, পাজেরো জিপসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। সময় যতই গড়াতে থাকে, এসব গাড়ির সারি ততই দীর্ঘ হতে থাকে। গতকাল বেলা তিনটা পর্যন্ত ঘাট এলাকা ছাড়িয়ে ওই সড়কের কয়ড়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার গাড়ির সারি ছিল।
এসব গাড়ির যাত্রী ও চালকেরা জানান, ঈদের আগে ও পরে সড়কটি দিয়ে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করে। তবে সড়কটি অত্যন্ত সরু এবং এক লেনের হওয়ায় গাড়িগুলোকে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে হয়।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) খন্দকার মুহম্মদ তানভীর হোসেন বলেন, গতকাল ভোর থেকেই যানবাহন ও যাত্রীর চাপ পড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে ১৮টি ফেরি যানবাহন পারাপার করছে। কাল রোববারের মধ্যে আরও দুটি ফেরি এই বহরে যুক্ত হবে। ফেরিগুলো সচল থাকলে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে নির্বিঘ্নে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা সম্ভব হবে।
চাপ বাড়ছে শিমুলিয়ায়
প্রতিনিধি, মুন্সিগঞ্জ জানান, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি পথে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। শিমুলিয়া ঘাট সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলের পর থেকে ঈদে ঘরমুখী মানুষ অল্প পরিসরে আসতে শুরু করে। তবে গতকাল সাহ্রির পর থেকে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। তবে দুপুরের আগেই ঘাটের অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যায়। এই নৌপথে চলছে ১৮টি ফেরি। এ ছাড়া ৮৭টি লঞ্চ ও ৫৪০টি স্পিডবোট চলাচল করছে।
সাতক্ষীরাগামী প্রাইভেট কারের আরোহী সাইফুল ইসলাম বিকেল পাঁচটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদ এলেই নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা হয়। পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ করতে ৫ বছর ধরে এ পথে যাতায়াত করছি। কত ভোগান্তিতে পড়েছি, বলে শেষ করা যাবে না। এবার ৩০ মিনিটের মধ্যেই ফেরিতে উঠতে পেরেছি।’
শিমুলয়া ঘাটের ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) মো. হেলাল উদ্দিন গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানান, ঘাটের অবস্থা খুব ভালো। এখন মালবাহী যানবাহন পার করা হচ্ছে। ছোট গাড়ি নেই। যাত্রীবাহী গাড়ি এলেই ফেরিতে উঠতে পারছে। শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. আলীমুজ্জামান জানান, গতকাল ভোর ৪টা থেকে ঈদে ঘরমুখী মানুষের চাপ কিছুটা লক্ষ করা যায়। ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ছয় শতাধিক ছোট গাড়ি পার করা হয়। তিনি আরও বলেন, নদীতে স্রোত ও নাব্যতা-সংকট থাকায় গত কয়েক বছর এ পথে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এবার নাব্যতা-সংকট দূর হয়েছে।