তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই তিনটি খুনের মামলা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
ঢাকার আদালত এবং পুলিশ সূত্র বলছে, তিনটি খুনের মামলায় ইতিমধ্যে পুলিশ ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। কয়েকজন আসামি খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে প্রথম দুটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায়। গত বছরের ১৮ জুলাই কেরানীগঞ্জের জিয়ানগর এলাকায় ৪৫ বছর বয়সী অজ্ঞাত এক পুরুষকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের এক দিন পর ১৯ জুলাই কেরানীগঞ্জের হজরতপুর এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে দুজনকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। এর মধ্যে ৩০ বছর বয়সী অজ্ঞাত এক ব্যক্তি পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তার পরের দিন ২০ জুলাই রাজধানীর বাড্ডায় তাসলিমা নামের এক নারীকে ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তিনটি খুনের ঘটনায় অজ্ঞাত চার থেকে পাঁচ শ ব্যক্তিকে আসামি করে পৃথক তিনটি মামলা করে পুলিশ। কেরানীগঞ্জে দুটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা-পুলিশ। আর বাড্ডার তাসলিমা হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গত বছরের ১৮ জুলাই থেকে পরপর তিন দিন কেরানীগঞ্জ ও বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে তিনজনকে হত্যা করা হয়।
কেরানীগঞ্জের হজরতপুরে অজ্ঞাত ৩০ বছর বয়সী তরুণকে হত্যার ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানা-পুলিশ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এঁদের মধ্যে দুজন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা হলেন আসামি মোশাররফ হোসেন (৩০) ও হাবিবুর রহমান (২৮)। মোশাররফ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন গত ২৬ নভেম্বর। আর হাবিবুর আদালতে জবানবন্দি দেন গত ২৪ সেপ্টেম্বর। দুজনের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে হাবিবুর ও মোশাররফ জবানবন্দি দিয়েছেন।
এসআই আনোয়ার হোসেন জানান, এখনো ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। যে ব্যক্তি খুন হয়েছিলেন, তাঁর পরিচয় উদ্ধারের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া কেরানীগঞ্জের জিয়ানগর এলাকায় ৪৫ বছর বয়সী অপর ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মাত্র দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। এই দুই আসামিও খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা হলেন হৃদয় মণ্ডল (২০) ও জয় বাড়ই (২০)। দুজনের বাড়ি কেরানীগঞ্জের খোলামোড়া এলাকায়। তাঁরা গত ২৪ জুলাই ঢাকার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ৪৫ বছর বয়সী নিহত ওই ব্যক্তির পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
তবে মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল-আমিন তালুকদার বলেন, ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে হত্যাকাণ্ডের দুটি মামলা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। যারা জড়িত, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
অবশ্য বাড্ডায় তাসলিমা হত্যাকাণ্ডে ইতিমধ্যে ১৪ জন আসামি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। ২২ জানুয়ারি মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য করেছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। মামলাটির তদন্ত সংস্থা ডিবি পুলিশ বলছে, তাসলিমা হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল কমপক্ষে ৫০ জন। যারা পলাতক, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।