সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর গত ৩০ দিনে দেশের ৮ বিভাগের মধ্যে করোনা রোগী সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বরিশাল ও রাজশাহীতে। এই সময়ে (৩১ মে থেকে ২৯ জুন) বরিশালে রোগী বেড়েছে ৭৯৯ শতাংশ আর রাজশাহীতে ৫৫২ শতাংশ। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গত ৩০ মে সাধারণ ছুটি শেষে অধিক সংক্রমিত এলাকা থেকে অনেকে এই দুই বিভাগে আসায় তাঁদের মাধ্যমে দ্রুত
সংক্রমণ ছড়িয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত জটিল রোগীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) জরুরি হলেও ঢাকার বাইরে এই সুবিধা নেই বললেই চলে। রাজধানীর বাইরে করোনা রোগীদের জন্য শয্যা আছে ৮ হাজার ৬৭৫টি এবং সচল আইসিইউ রয়েছে ২৪০টি।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ছুটি শেষে বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলায় এবং রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার মধ্যে ছয়টিতে করোনা রোগীর সংখ্যা ব্যাপক বেড়েছে। তবে রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরে করোনা রোগীর সংখ্যা এখনো বেশ কম।
>সাধারণ ছুটি শেষে বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগে রোগী বাড়লেও হাসপাতাল ও আইসিইউ সুবিধা এখনো অপর্যাপ্ত
আইইডিসিআরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ৩০ দিনে ঢাকা বিভাগে (ঢাকা মহানগর বাদে) করোনা রোগী বেড়েছে ২১৮ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে ২৪৮ শতাংশ, সিলেটে ৪৭৩ শতাংশ, রংপুরে ১৬৭ শতাংশ, ময়মনসিংহে ১৯১ শতাংশ ও খুলনা বিভাগে রোগী বেড়েছে ৫১০ শতাংশ।
গত ৩১ মে বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় করোনা শনাক্ত রোগী ছিলেন ২৯৭ জন। তখন ৬ জেলাতেই রোগীর সংখ্যা ১০০–এর নিচে ছিল। গতকাল সোমবার পর্যন্ত এই বিভাগে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬৭০ জন। অর্থাৎ গত ৩০ দিনে রোগী বেড়েছে ৭৯৯ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে করোনা রোগীদের শয্যা রয়েছে মাত্র ৪৪৩টি। সচল আইসিইউ রয়েছে ১০টি।
বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, লঞ্চ চলাচল শুরুর পর সংক্রমিত জেলা থেকে অনেকে বরিশাল এসেছেন। তাঁদের মাধ্যমে করোনা কমিউনিটিতে (জনগোষ্ঠী) ছড়িয়েছে। পরিবহন, হাটবাজার কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি।
রাজশাহী বিভাগের বগুড়াতে গত ৩১ মে পর্যন্ত করোনা রোগী ছিলেন ২১৬ জন। গতকালের তথ্য অনুযায়ী, এখন রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৭৮২। এই বিভাগের জয়পুরহাট, পাবনা, নওগাঁ ও সিরাজগঞ্জ জেলাতেও ব্যাপক রোগী বেড়েছে।
রাজশাহী স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য প্রথম আলোকে বলেন, রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলায় শনাক্ত রোগী বেশি। বগুড়া ব্যবসায়িক কেন্দ্র হওয়ায় অধিক সংক্রমিত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর থেকে অনেকে আসেন। ফলে বগুড়াতে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনটা (গোষ্ঠীতে সংক্রমণ) বেশি হয়েছে।
গত ৩০ দিনে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৯৪০ শতাংশ রোগী বেড়েছে খুলনা জেলাতে। ৩১ মে পর্যন্ত খুলনা জেলায় রোগী ছিলেন ৭৬ জন। এখন রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৫১ জন। খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার মধ্যে যশোর বাদে বাকি ৯ জেলাতেই ৩১ মে পর্যন্ত শনাক্ত রোগী ১০০–এর নিচে ছিল। এখন মাগুরা ও মেহেরপুর বাদে বাকি সব জেলাতেই আক্রান্ত বেড়েছে কয়েক গুণ। খুলনা বিভাগে করোনা রোগীদের জন্য ৭২৫টি শয্যা ও ১৮টি আইসিইউ রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানায় অনেক জেলাতে সংক্রমণ বাড়ছে। আবার পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতেও শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে। জেলাগুলোতে জনগণের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে সিভিল সার্জনদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত ৩১ মে পর্যন্ত ৩১টি জেলায় শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ১০০–এর নিচে ছিল। এখন শুধু লালমনিরহাট, মাগুরা ও মেহেরপুর—এই তিন জেলায় শনাক্ত রোগী ১০০–এর নিচে রয়েছে। গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে শনাক্ত রোগী ছিলেন ৯৪ জন, গতকাল রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয় ১০১।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, করোনার সংক্রমণের শুরু থেকেই সঠিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। এখনো সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সংক্রমণের হার অনুযায়ী লাল-হলুদ-সবুজ এলাকা দ্রুত চিহ্নিত করতে হবে। লাল চিহ্নিত এলাকায় করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।