[বিশ্বের ৭০টি দেশের এক হাজারের বেশি সংবাদপত্রশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল নিউজ মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন (ইনমা)। এর ব্লগে ২৩ মার্চ ২০২০–এ প্রকাশিত Zero incidents of COVID-19 transmission from print surfaces অবলম্বনে তৈরি করা প্রতিবেদন। লেখক ইনমার নির্বাহী পরিচালক।]
ছাপা পত্রিকা, ছাপা ম্যাগাজিন, ছাপা চিঠি থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, এমন কোনো ঘটনা জানা যায়নি। এ তথ্য জানিয়েছেন পৃথিবীর সামনের সারির চিকিৎসক আর বিজ্ঞানীরা। ইন্টারন্যাশনাল নিউজ মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন (ইনমা) চারটি বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে। চারটি উৎস হচ্ছে:
—ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও —জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠন)
—দ্য জার্নাল অব হসপিটাল ইনফেকশন (যুক্তরাজ্যের হেলথকেয়ার ইনফেকশন সোসাইটির মেডিকেল জার্নাল। মহামারি, স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে মৌলিক প্রবন্ধ প্রকাশ করে থাকে)
—ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেসের ২৭টি ইনস্টিটিউটের একটি)
—জন ইনস সেন্টার (উদ্ভিদ ও অণুজীব নিয়ে গবেষণা ও প্রশিক্ষণের যুক্তরাজ্যে অবস্থিত স্বাধীন প্রতিষ্ঠান)
করোনাভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, এমন জায়গা থেকে কোনো মোড়ক নেওয়া নিরাপদ কি না, সে সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে: কোনো সংক্রমিত ব্যক্তি বাণিজ্যিক পণ্যগুলোকে দূষিত করার আশঙ্কা কম থাকে এবং যে মোড়ক সরানো হয়েছে, ভ্রমণ করেছে এবং বিভিন্ন অবস্থা ও তাপমাত্রায় উন্মোচিত হয়েছে তার থেকে কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিও কম থাকে।
দ্য ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) বলছে, যে পৃষ্ঠে ভাইরাস আছে, তা স্পর্শ করে কোনো ব্যক্তির কোভিড-১৯ ‘সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে’, ‘তবে তা ভাইরাস ছড়ানোর প্রধান অবলম্বন এমন ভাবার কারণ নেই।’
হার্টফোর্ড হেলথকেয়ার আরও সরাসরি বলছে, ‘আপনার ঘরে পৌঁছে দেওয়া জিনিস নিয়ে ভয় পাবেন না। করোনাভাইরাস কোনো জিনিসের ওপর দীর্ঘক্ষণ টিকে থাকতে পারে না।’
গত সপ্তাহে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন–এ একটি গবেষণার ফল ছাপা হয়েছে। গবেষণাটি করেছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল, ইউসিএলএ এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়। বিভিন্ন রকম পৃষ্ঠে করোনাভাইরাস কতক্ষণ টিকে থাকতে পারে, গবেষণায় তা দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কার হার সবচেয়ে কম হচ্ছে তামা থেকে। সম্ভবত তামার আণবিক গঠন এর কারণ। আর কম ছড়ায় কার্ডবোর্ড থেকে। যার কারণ হতে পারে কার্ডবোর্ড ছিদ্রযুক্ত।
ছিদ্র নেই আর মসৃণ পৃষ্ঠে করোনাভাইরাস টিকে থাকে সবচেয়ে বেশি সময়। গবেষকেরা দেখেছেন যে প্লাস্টিক আর স্টেইনলেস স্টিলে এ ভাইরাস টেকে তিন দিনের বেশি। তবে এটি শুনতে যত ভয়াবহ মনে হচ্ছে, ততটা হয়তো নয়। কারণ, বাতাসের সংস্পর্শে এলেই এটির শক্তি দ্রুত কমতে থাকে। বাতাসের স্পর্শে এলে প্রতি ৬৬ মিনিটে মধ্যে এর ক্ষমতা অর্ধেক হতে থাকে। তিন ঘণ্টা পর এর সংক্রমণের ক্ষমতা কমে হয় আট ভাগের এক ভাগ। ছয় ঘণ্টা পর তা হয়ে যায় মূল সংক্রমণ ক্ষমতার ২ শতাংশ।
নিউজপ্রিন্ট কাগজ কার্ডবোর্ডের চেয়ে অনেক বেশি ছিদ্রযুক্ত। আর তা মোটেও মসৃণ নয়। বরং অনেক কর্কশ। যেসব জিনিসে ভাইরাস টিকে থাকার আশঙ্কা সবচেয়ে কম, নিউজপ্রিন্ট তার মধ্যে অন্যতম।
১০ মার্চ বিবিসি রেডিও স্কটল্যান্ডে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জন ইনস সেন্টারের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ জর্জ লোমনোসফ বলেছেন, ‘যেভাবে ছাপা হয় আর যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়, সে কারণে পত্রিকা এমনিতেই বেশ জীবাণুমুক্ত থাকে। এ কারণেই ভাজা খাবার নিউজপ্রিন্টে রেখে খাওয়া হয়। আর কালি ও ছাপা একে বাস্তবে বেশ জীবাণুমুক্ত করে দেয়। এর থেকে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা অতি ক্ষুদ্র।’
সব মিলিয়ে বলা যায়:
১. নিউজপ্রিন্ট থেকে কোভিড-১৯ ভাইরাস ছড়ানোর কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
২. ভাইরাস ছড়ানো নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, ছিদ্রযুক্ত অমসৃণ জড়ো পৃষ্ঠে ভাইরাস টেকার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম।
৩. যেভাবে ছাপা হয় আর যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়, সে কারণে পত্রিকা এমনিতেই বেশ জীবাণুমুক্ত থাকে।
৪. পত্রিকা ছাপা হওয়ার সময় হাতের স্পর্শ লাগে না। আর বর্তমানে বিতরণেও সংক্রমণ রোধের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: