চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে

ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির সংঘর্ষ, শিবির নেতা নিহত

ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে নিহত মামুন হোসেন। ছবি: সৌরভ দাশ
ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে নিহত মামুন হোসেন। ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মামুন হোসেন নামের শিবিরের এক নেতা নিহত হয়েছেন। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আজ রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

গতকাল শনিবার রাতে সিলেট নগরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক জালাল আহমেদের ওপর হামলার ঘটনার জেরে ক্যাম্পাসে এ ঘটনার সূত্রপাত। গতকাল রাত থেকেই ক্যাম্পাসে উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়।

নিহত মামুন হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমানত হল শাখার ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে জালালের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে আজ বেলা একটার দিকে ক্যাম্পাসের রেলস্টেশন চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের আলাওল আবাসিক ছাত্রাবাস, ২ নম্বর গেইট, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ প্রদক্ষিণ করে সোহরাওয়ার্দী হল হয়ে শাহ আমানত আবাসিক হলের সামনে আসে।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ছাত্রশিবির নিয়ন্ত্রিত আমানত হলের মূল ফটকের তালা ভেঙে হলের সামনে অবস্থান নেন। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলির শব্দ শোনা যায়।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দফায় দফায় শাহ আমানত হলের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। প্রতিবারই পুলিশের বাধায় ব্যর্থ হয়। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হলে ঢোকেন। সেখানে অবস্থানরত শিবিরের কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের মুখোমুখি সংঘর্ষ এবং উভয় পক্ষে গুলিবিনিময় হয়। বেশ কয়েকটি ককটেলও ফাটানো হয়। এতে কয়েকজন আহত হন। সংঘর্ষে গুরুতর আহত মামুন হোসেনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিত্সক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে অবস্থান করা শিবিরের নেতা-কর্মীরা শাহ আমানত হলের দিকে আসার চেষ্টা করলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

সংঘর্ষের ঘটনায় আহত চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ছাত্র শামসুল হক, পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র রাহাত, ইতিহাস তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এনামুল হক ও গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র আমজাদ হোসেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আহত আমজাদ হোসেন বলেন, ‘শাহ আমানত হলের ডাইনিংয়ে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম। এ সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে হলে হামলার চেষ্টা চালায়।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার রাখাল চন্দ্র বড়ুয়া ‘প্রথম আলো’কে বলেন, ‘আহতদের মধ্যে শামসুল ও রাহাতের অবস্থা খুবই গুরুতর।’

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আক্তার ‘প্রথম আলো’কে বলেন, ‘ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে শুনেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ক্যাম্পাসে ২০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’ 

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ‘প্রথম আলো’কে বলেন, ‘ছাত্রলীগের হামলায় আমাদের এক নেতা খুন হয়েছে। আরও দুই-একজন নেতা-কর্মীকে আমরা খুঁজে পাচ্ছি না।’

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আরিফুল ইসলাম ‘প্রথম আলো’কে বলেন, ‘আমাদের মিছিল শাহ আমানত হলের সামনে এলে ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা আমাদের উদ্দেশে উসকানিমূলক মন্তব্য করে। আমরা এর প্রতিবাদ করতে গেলে তারা আমাদের ওপর গুলি ছোড়ে। আমরা তাদের প্রতিরোধ করি। এই ঘটনার জন্য শিবিরই দায়ী।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) খান তৌহিদ ওসমানের মুঠোফোন ঘটনার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে।

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে রাত সাড়ে নয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।