পুরান ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি-বাণিজ্য করছে ছাত্রলীগ। প্রতিটি আসনের বিপরীতে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কবি নজরুলের ছাত্রলীগের নেতারা ভর্তি-বাণিজ্যে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতারা অস্বীকার করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগের নেতাদের অনুমতি ছাড়া অপেক্ষমাণ থাকা শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফরম দেওয়া হয় না। এ জন্য আগেই নির্দিষ্ট পরিমাণের টাকা ছাত্রলীগের নেতাদের হাতে দিতে হয়।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যদি কেউ ভর্তি-বাণিজ্য করে থাকে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে কলেজ প্রশাসনকে তাদের বিরুদ্ধে একাডেমিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করব।’ কবি নজরুল সরকারি কলেজ: কবি নজরুল সরকারি কলেজে এ বছর এইচএসসি প্রথম বর্ষে এক হাজার ১৭০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার কথা। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৩৫০, ব্যবসায় শিক্ষায় ৪৫০ ও মানবিকে ৩৭০ জন। এরই মধ্যে বোর্ডের মেধাতালিকা অনুযায়ী গত ১৭ জুন প্রথম দফার ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়ে শেষ হয় ২৭ জুন। এর মধ্যে ভর্তি হয়েছে প্রায় ৫৫০ জন শিক্ষার্থী। এখন চলছে মেধাতালিকায় অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের ভর্তির কার্যক্রম। ১০ জুলাই অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তির কার্যক্রম শেষ হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন, কলেজ প্রশাসনের সহায়তায় ছাত্রলীগ প্রতিবছরই ভর্তি-বাণিজ্য করে। ভর্তিসংশ্লিষ্ট যে শিক্ষকেরা আছেন, তাঁরাও ছাত্রলীগের কাছে অসহায়। কোনো প্রতিবাদ করলে হুমকি দেওয়া হয়। গত রোববার সরেজমিনে দেখা গেল, কলেজের প্রধান ফটকের সামনে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে টাকা লেনদেনের মধ্যস্থতা করছেন ছাত্রলীগের একাধিক কর্মী। যাঁদের সঙ্গে টাকায় বনিবনা হয়, তাঁদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মামুন-উর-রশিদের কাছে। মামুন টাকা পেয়ে অনুমতি দিলেই ভর্তির ফরম হাতে পাওয়া যায়।
ভর্তি হতে আসা এক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলে, ‘ওয়েটিং লিস্টে সিরিয়াল পেছনে থাকায় বড় ভাইরা ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের এক কর্মী জানান, অপেক্ষমাণ থাকা প্রায় ৪৫০ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো হয়েছে। প্রত্যেকের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
জানতে চাইলে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মামুন-উর-রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পত্রিকায় নিউজ করে কোনো লাভ নেই। আমার কাজ আমি করমুই। আপনাগো মতো অনেকেরই ভর্তির তদবিরও করি।’
ভর্তি-বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজের উপাধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নিয়ম মেনেই ভর্তি করাচ্ছি। বাইরে কে কী করছে, তা জানা নেই।’
সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ: প্রায় একই চিত্র সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে। কলেজ সূত্র জানায়, এ বছর এইচএসসি প্রথম বর্ষে এক হাজার ৩৭৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির কথা। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৩০০, ব্যবসায় শিক্ষায় ৬৭৫ ও মানবিকে ৪০০ জন। এই কলেজে প্রথম দফায় প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। এখন চলছে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তির কার্যক্রম। এই সুযোগে কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ভর্তি-বাণিজ্য করছে বলে অভিযোগ। সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজের ‘ছাত্র সংসদ’ দপ্তরের সামনে ও ভেতরে চেয়ারে বসে আছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। মেধাতালিকায় অপেক্ষমাণ কয়েকজন শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলছে। যে শিক্ষার্থীর সঙ্গে টাকার হিসাব মিলে যায়, তাকেই ভর্তির ফরমের ব্যবস্থা করে দেন ছাত্রলীগের কর্মীরা।
কলেজে ভর্তি হতে আসা এক শিক্ষার্থী বলে, ‘এ বছর এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। অনেক স্বপ্ন ছিল রাজধানীর একটি কলেজে পড়াশোনা করব। কিন্তু ভর্তি হওয়ার আগেই কলেজে বড় ভাইদের পেছনে দৌড়াতে হচ্ছে।’ সে ভর্তির জন্য ছাত্রলীগের নেতাদের টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করে। ভর্তি-বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান বলেন, ছাত্রলীগের কোনো কর্মীর ভর্তি-বাণিজ্যে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কলেজের অধ্যক্ষ রামদুলাল রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভর্তিতে দুর্নীতির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’