চীনের বিজ্ঞানীদের একটি অংশ দাবি করছেন, বাংলাদেশ ও ভারতে প্রথম মানুষ থেকে মানুষে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। সংক্রমণ ঘটার সম্ভাব্য সময় গত বছর জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যে। করোনাভাইরাসের জিন বিশ্লেষণের তথ্য ব্যবহারের দাবি করে চীনের তিন বিজ্ঞানী বলছেন, চীনের উহানে প্রথম সংক্রমণ ঘটেনি।
প্রভাবশালী জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতিমধ্যে ল্যানসেট–এর প্রাক্-প্রকাশনা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এই প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছে। ওই প্রবন্ধ উদ্ধৃত করে গতকাল শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সান বলছে, উহানের দোষ এখন বাংলাদেশ বা ভারতের ওপর চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে।
গত বছর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। গত বছর ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চীনের কার্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ভাইরাসের তথ্য প্রকাশ করে। শুরুতে এই ভাইরাস চীনের প্রতিবেশী দেশগুলোতে ছড়ায়। একপর্যায়ে তা মহামারি আকারে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম রোগী শনাক্তের ঘোষণা আসে ৮ মার্চ।
এরই মধ্যে চীনের বিজ্ঞানীদের দাবিকে পুরোপুরি অনুমাননির্ভর বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত শুক্রবার সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মাইক রায়ান এক ভার্চ্যুয়াল ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘চীন থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়নি, এমন কথা বলা আমাদের জন্য একেবারে অনুমাননির্ভর হবে।’
চীনের বিজ্ঞানীদের নতুন তথ্যের ব্যাপারে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে দেশের চারজন বিজ্ঞানীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে জিন বিশ্লেষণের যে তথ্য আছে, তাতে দেখা যায়, এই ভাইরাস অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছে।’
গত বছর চীনের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। গত বছর ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চীনের কার্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ভাইরাসের তথ্য প্রকাশ করে। বাংলাদেশে প্রথম রোগী শনাক্তের ঘোষণা আসে ৮ মার্চ।
দেশের বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নতুন করোনাভাইরাসের জিনের রূপান্তর বিশ্লেষণ করেছে। এসব বিশ্লেষণে বেশ কয়েকটি স্ট্রেইন বা ক্লেড (ধরন) চিহ্নিত হয়েছে। আইইডিসিআর ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) যৌথ গবেষণায় যুক্ত বিজ্ঞানীরা বলেছেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে ঘটে থাকতে পারে।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম জিন বিশ্লেষণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন চাইল্ড হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক সমীর সাহা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চীনা বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা তাঁদের প্রবন্ধে প্রথম সংক্রমণ নিয়ে অপরিপক্ব মন্তব্য করেছেন।’ তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণা ও বিশ্লেষণ হওয়া দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন।
চীন থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়নি— এমন কথা বলা আমাদের জন্য একেবারে অনুমাননির্ভর হবেমাইক রায়ান, নির্বাহী পরিচালক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
চীনের বিজ্ঞানীরা বলছেন, সবচেয়ে কম রূপান্তর ঘটেছে, এমন স্ট্রেইন বা ধরনই করোনাভাইরাসের প্রথম জিন বা তারাই আদি ভাইরাস। কম রূপান্তর ঘটেছে, এমন করোনাভাইরাসের জিন পাওয়া গেছে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, গ্রিস, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইতালি, চেক প্রজাতন্ত্র ও রাশিয়াতে। এর মধ্যে সবচেয়ে কম রূপান্তর ঘটেছে ভারতে ও বাংলাদেশে। এই দুটি দেশের ভাইরাসের রূপান্তরের ক্ষমতাও কম।
চীনের বিজ্ঞানীরা অবশ্য বলেছেন, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের ব্যাপারে অনেক রহস্য আছে। প্রকৃতিতে কোন প্রাণী এই ভাইরাস বহন করে, তা না জানা গেলে এর উৎপত্তি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশে এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৬০ হাজার ৬১৯ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৬ হাজার ৫৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৮৮৫ জন।
করোনার বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত বিশ্বে মোট ৬ কোটি ২১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৪ লাখ ৫২ হাজার ২৮৩ জন। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন চার কোটি ২৯ লাখ ৩৯ হাজার ৭৮০ জন।