আবার বাংলাদেশের নীলফামারীর চিলাহাটি ও ভারতের জলপাইগুড়ির হলদিবাড়ি পথে ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। আগামী ১৭ ডিসেম্বর ভারত থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত মালবাহী ট্রেন চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই পথে যাত্রীবাহী ট্রেন চালুরও পরিকল্পনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঢাকার সঙ্গে ভারতের শিলিগুড়ির যোগাযোগ স্থাপিত হতে পারে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৯৬৫ সালের আগে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি পথে রেল যোগাযোগ ছিল। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সীমান্ত এলাকার প্রায় ৯ কিলোমিটার পথে রেললাইন তুলে নেওয়া হয়। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের বন্ধ রেলসংযোগগুলো চালুর সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি পথও ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ অংশের ৯ কিলোমিটারে ব্রডগেজ রেললাইন ও অবকাঠামো নির্মাণে ৮০ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়। অন্যদিকে ভারতের অংশে সাড়ে তিন কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে প্রকল্প নেয় ভারতের সরকার। এখন দুই প্রান্তেই রেললাইন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। কিছু অবকাঠামোর কাজ বাকি আছে।
চিলাহাটি থেকে ভারত সীমান্ত পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সূত্র জানায়, এই পথে যাত্রীবাহী ট্রেন চালাতে হলে স্টেশন, অভিবাসন অবকাঠামো এবং স্টেশনসংলগ্ন খোলা জায়গা দরকার। এর জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এ জন্যই প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ১৪৩ কোটি টাকা লাগতে পারে।
১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভিডিও কলে যুক্ত হয়ে মালবাহী ট্রেন চলাচল উদ্বোধনের কথা রয়েছে। আগামী মার্চের শেষের দিকে যাত্রীবাহী ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
রেলের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ১৭ ডিসেম্বর মালবাহী ট্রেন চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর নির্মাণকাজ চলছে। স্টেশনসহ অন্যান্য অবকাঠামোরও আধুনিকায়ন করা হবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, চিলাহাটি-হলদিবাড়ি পথে বাংলাদেশের কোনো মালবাহী ট্রেন চলবে না। কারণ, বাংলাদেশ থেকে ভারতে রেলপথে খুব বেশি মালামাল যায় না। সামান্য যেসব পণ্য রপ্তানি হয়, এর বেশির ভাগই বেনাপোল দিয়ে যায়। ফলে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি পথে শুধু ভারতের মালবাহী ট্রেনই চলবে। প্রথমদিকে তেলবাহী ট্রেন চলবে। এরপর পাথরসহ অন্য মালামালও পার্বতীপুরে আসবে।
ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে দর্শনা হয়ে যাত্রীবাহী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু আছে। খুলনা থেকে বেনাপোল হয়ে কলকাতায় চলাচল করে বন্ধন এক্সপ্রেস। তবে করোনা সংক্রমণের কারণে দুই পথেই যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। চিলাহাটি-হলদিবাড়ি হয়ে শিলিগুড়ি পর্যন্ত ট্রেন চালুর বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে। তবে এই পথে ট্রেন চালানোর মতো ইঞ্জিন-কোচ এখন রেলের নেই বলে সংস্থাটির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। নতুন ইঞ্জিন-কোচ আমদানি করার পর যাত্রীবাহী ট্রেন চালুর করা হতে পারে।