চিনির দামও নাগালছাড়া

চিনি
ফাইল ছবি

দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের পর নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে চিনির দামও। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়ে এখন ৭৮ থেকে ৮০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজি ৮৪ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, বাজারে চিনির কেজি এখন ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। গত বছর এ সময়ে একই চিনি কেজিপ্রতি ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা ছিল। এক বছরে পণ্যটির দাম বেড়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ।

চিনি আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে অস্থিরতার কারণে চিনির দাম বাড়ছে। আর দর এত বেশি হওয়ার আরেকটি কারণ উচ্চ করহার। অবশ্য বিক্রেতারা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেও নতুন দরের চিনি এখনো দেশে আসেনি। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা আগে কেনা চিনিই বেশি দামে বিক্রি করছেন।

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম বেড়ে গেছে জানিয়ে কোম্পানিগুলো বাড়তি দর চাইছে। এ কারণে পাইকারি বাজারও বাড়তি। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে গতকাল সোমবার চিনির দাম ছিল প্রতি কেজি ৭৪ টাকা।

কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে গতকাল প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চিনি ৩ হাজার ৬৫০ থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়, প্রতি কেজি ৭৩-৭৪ টাকা।

দেশে বছরে ১৪ লাখ টনের মতো পরিশোধিত চিনির চাহিদা রয়েছে। এর প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়। পাঁচ থেকে ছয়টি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে তা পরিশোধনের পর বাজারে ছাড়ে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে অপরিশোধিত চিনির টনপ্রতি আমদানি শুল্ক ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়। আবার নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয় ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ করে অগ্রিম কর (এটি) ও অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করা হয়। চিনির করকাঠামো এমন যে বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে আমদানিতে কর বেড়ে যায়।

ইন্টারন্যাশনাল সুগার অর্গানাইজেশনের (আইএসও) ওয়েবসাইটে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকেই সাদা চিনির টনপ্রতি দর ৪৫০ ডলারের আশপাশে ছিল। গত কয়েক দিনে তা ৫০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

চিনি আমদানিকারক শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববাজারের চিনির দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি জাহাজভাড়াও অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে ব্যয় বেড়েছে। তিনি বলেন, প্রতি কেজি চিনিতে এখন ২৮ টাকার মতো কর দিতে হয়।

দেশে ভোজ্যতেল এখন রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির হিসাবে, এক বছর আগের তুলনায় এখন সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ৩৮ থেকে ৭০ শতাংশ বেশি। মানুষকে পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল কিনতে হচ্ছে ৭০০ টাকা দরে, যা এক বছর আগে ৫০০ টাকার মধ্যে ছিল।